তারাবীহ শব্দের অর্থ এবং নামকরণ :
আরবি ’তারাবীহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবীহ শব্দটি বহুবচন, এর একবচন হলো তারবিহাহ; যার আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্রাম ও প্রশান্তি। রমাদান মাসে এশার নামাযের পর যে সুন্নত নামায কায়েম করা হয়, তা হলো তারাবীহ নামায। যেহেতু এ নামাযে প্রতি চার রাকাত পরপর বিরতির মাধ্যমে বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।
এটি কি বাধ্যতামূলক?
রমাদান মাসে সারা বিশ্বের মুসলমানরা তারাবীহ নামায পড়েন। এটি কোন বাধ্যতামূলক নামায নয়। অধিকাংশ মুসলমানরা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায আদায় করেন, আবার কেউ কেউ বাড়িতেই তা আদায় করতে পছন্দ করেন।
তারাবীহ নামায কত রাকাত?
এটি একটি ইখতিলাফী অর্থাৎ মতবিরোধপূর্ণ মাস্আলা। এ বিষয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য মত সমূহ হচ্ছে, কেউ কেউ বলেছেন বিতরসহ তারাবীহ ২৩ রাকাত। অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ২০ রাকাত। এভাবে বিতর ও তারাবীহ মিলে কেউ বলেছেন ১৩ রাকাত অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ১০ রাকাত।
আবার কেউ বলেছেন ১১ রাকাত অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ৮ রাকাত। প্রত্যেক মতের স্বপক্ষে হাদিসের দলিল রয়েছে।
কিছু ইসলামিক স্কলার বিশ্বাস করেন তারাবীহ নামায ৮ রাকাত পড়াই উত্তম আবার অন্যরা ২০ রাকাত পছন্দ করেন।
হানাফী, শাফেয়ী, মালিকি এবং হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগন ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকেন।
মক্কা ও মদিনায় তারাবীহ:
যদি ৮ রাকাত তারাবীহ পড়া সুন্নত হয়, তাহলে মক্কার মসজিদুল হারামে ও মদিনার মসজিদে নববীতে কেন দীর্ঘদিন ধরে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয়ে আসছে? প্রকৃতপক্ষে উমর বিন খাত্তাব (রা.) ২০ রাকাত তারাবীহ’র ধারণার সূচনা করেছিলেন। যা পরবর্তীতে উসমান বিন আফফান (রা.) এর শাসনামলেও অব্যাহত ছিল। বর্তমানে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীতে ১০ রাকাত তারাবীহ পড়া হচ্ছে।
মহিলাদের জন্য তারাবীহ রাকাত:
মহিলারা যত ইচ্ছা তারাবীহ নামায পড়তে পারেন। মহিলাদের কত রাকাত তারাবীহ নামায আদায় করা উচিত তার জন্য ইসলামে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
বাড়িতে তারাবীহ নামায কিভাবে পড়বেন?
আপনি যদি একাকী ঘরে আদায় করেন তো ২ রাকাত ২ রাকাত করে যত ইচ্ছা তত রাকাত তারাবীহ পড়তে পারেন। তারাবীহ অন্যান্য ২ রাকাত নামাযের মতই পড়া হয়। দাঁড়ানো, তাকবীর, ফাতিহা পাঠ, তেলাওয়াত, রুকু, সিজদা, তাশাহুদ এবং সালাম ফিরানো থেকে শুরু করে সবকিছুই একই রকম। কিন্তু তা বিতর নামাযের মাধ্যমেই শেষ করতে হবে।
বিতর ১, ৩, ৫, ৭ বা ৯ রাকাত দিয়ে আদায় করা যায়।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কি একই?
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ এক নামায নয়। বরং তা ভিন্ন ভিন্ন নামায। তাহাজ্জুদ বারো মাস আদায় করা হয় আর তারাবীহ শুধু রমাদান মাসে আদায় করা হয়।
তবে তারাবীহ যদি রাতের শুরুতে আদায় না করে শেষ রাতে আদায় করে, তখন তাহাজ্জুদ তারাবীহতে অনুপ্রবেশ করবে।
উপসংহার:
উল্লেখিত, তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কুরআন বা হাদিস তারাবীহ নামাযের রাকাত সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে না। তাই আপনি যত ইচ্ছা তারাবীহ নামায পড়তে পারেন। মূল বিষয় হচ্ছে তারাবীহ লম্বা কিয়ামে আদায় করা একটি রাতের সালাত অর্থাৎ যা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আদায় করা হয়।
বর্তমানে আমাদের উপমহাদেশে এই সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে প্রচুর বিরোধ দেখা যায় এমনকি এটা নিয়ে বিভিন্ন দলে উপদলেও মানুষ বিভক্ত হয়ে যায় এবং কোথাও বা বিবাদে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
মূলত আপনি ইমামের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিয়াম করবেন তা ৮ রাকাত হোক বা ২০ রাকাত হোক। রাকাতের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই কেননা রাসুল (সাঃ) রাকাতের কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেন নাই বরং তা উন্মুক্ত রেখেছেন। কত সুন্দর ভাবে আপনি এই সালাত আদায় করেছেন এটাই মুখ্য, রাকাত সংখ্যা মুখ্য নয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী।
তারাবীহ নামায ও কিছু প্রশ্নের উত্তর
শেয়ার করুন
তারাবীহ শব্দের অর্থ এবং নামকরণ :
আরবি ’তারাবীহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। তারাবীহ শব্দটি বহুবচন, এর একবচন হলো তারবিহাহ; যার আভিধানিক অর্থ হলো বিশ্রাম ও প্রশান্তি। রমাদান মাসে এশার নামাযের পর যে সুন্নত নামায কায়েম করা হয়, তা হলো তারাবীহ নামায। যেহেতু এ নামাযে প্রতি চার রাকাত পরপর বিরতির মাধ্যমে বিশ্রাম নেওয়া হয়, তাই এ নামকরণ করা হয়েছে।
এটি কি বাধ্যতামূলক?
রমাদান মাসে সারা বিশ্বের মুসলমানরা তারাবীহ নামায পড়েন। এটি কোন বাধ্যতামূলক নামায নয়। অধিকাংশ মুসলমানরা মসজিদে গিয়ে তারাবীহ নামায আদায় করেন, আবার কেউ কেউ বাড়িতেই তা আদায় করতে পছন্দ করেন।
তারাবীহ নামায কত রাকাত?
এটি একটি ইখতিলাফী অর্থাৎ মতবিরোধপূর্ণ মাস্আলা। এ বিষয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। উল্লেখযোগ্য মত সমূহ হচ্ছে, কেউ কেউ বলেছেন বিতরসহ তারাবীহ ২৩ রাকাত। অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ২০ রাকাত। এভাবে বিতর ও তারাবীহ মিলে কেউ বলেছেন ১৩ রাকাত অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ১০ রাকাত।
আবার কেউ বলেছেন ১১ রাকাত অর্থাৎ বিতর ৩ রাকাত হলে তারাবীহ হবে ৮ রাকাত। প্রত্যেক মতের স্বপক্ষে হাদিসের দলিল রয়েছে।
কিছু ইসলামিক স্কলার বিশ্বাস করেন তারাবীহ নামায ৮ রাকাত পড়াই উত্তম আবার অন্যরা ২০ রাকাত পছন্দ করেন।
হানাফী, শাফেয়ী, মালিকি এবং হাম্বলি ফিকহের অনুসারীগন ২০ রাকাত তারাবীহ পড়ে থাকেন।
মক্কা ও মদিনায় তারাবীহ:
যদি ৮ রাকাত তারাবীহ পড়া সুন্নত হয়, তাহলে মক্কার মসজিদুল হারামে ও মদিনার মসজিদে নববীতে কেন দীর্ঘদিন ধরে ২০ রাকাত তারাবীহ পড়া হয়ে আসছে? প্রকৃতপক্ষে উমর বিন খাত্তাব (রা.) ২০ রাকাত তারাবীহ’র ধারণার সূচনা করেছিলেন। যা পরবর্তীতে উসমান বিন আফফান (রা.) এর শাসনামলেও অব্যাহত ছিল। বর্তমানে মক্কার মসজিদুল হারাম এবং মদিনার মসজিদে নববীতে ১০ রাকাত তারাবীহ পড়া হচ্ছে।
মহিলাদের জন্য তারাবীহ রাকাত:
মহিলারা যত ইচ্ছা তারাবীহ নামায পড়তে পারেন। মহিলাদের কত রাকাত তারাবীহ নামায আদায় করা উচিত তার জন্য ইসলামে কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি।
বাড়িতে তারাবীহ নামায কিভাবে পড়বেন?
আপনি যদি একাকী ঘরে আদায় করেন তো ২ রাকাত ২ রাকাত করে যত ইচ্ছা তত রাকাত তারাবীহ পড়তে পারেন। তারাবীহ অন্যান্য ২ রাকাত নামাযের মতই পড়া হয়। দাঁড়ানো, তাকবীর, ফাতিহা পাঠ, তেলাওয়াত, রুকু, সিজদা, তাশাহুদ এবং সালাম ফিরানো থেকে শুরু করে সবকিছুই একই রকম। কিন্তু তা বিতর নামাযের মাধ্যমেই শেষ করতে হবে।
বিতর ১, ৩, ৫, ৭ বা ৯ রাকাত দিয়ে আদায় করা যায়।
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ কি একই?
তারাবীহ ও তাহাজ্জুদ এক নামায নয়। বরং তা ভিন্ন ভিন্ন নামায। তাহাজ্জুদ বারো মাস আদায় করা হয় আর তারাবীহ শুধু রমাদান মাসে আদায় করা হয়।
তবে তারাবীহ যদি রাতের শুরুতে আদায় না করে শেষ রাতে আদায় করে, তখন তাহাজ্জুদ তারাবীহতে অনুপ্রবেশ করবে।
উপসংহার:
উল্লেখিত, তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, কুরআন বা হাদিস তারাবীহ নামাযের রাকাত সংখ্যা সীমাবদ্ধ করে না। তাই আপনি যত ইচ্ছা তারাবীহ নামায পড়তে পারেন। মূল বিষয় হচ্ছে তারাবীহ লম্বা কিয়ামে আদায় করা একটি রাতের সালাত অর্থাৎ যা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে আদায় করা হয়।
বর্তমানে আমাদের উপমহাদেশে এই সালাতের রাকাত সংখ্যা নিয়ে প্রচুর বিরোধ দেখা যায় এমনকি এটা নিয়ে বিভিন্ন দলে উপদলেও মানুষ বিভক্ত হয়ে যায় এবং কোথাও বা বিবাদে লিপ্ত হতে দেখা যায়।
মূলত আপনি ইমামের সাথে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কিয়াম করবেন তা ৮ রাকাত হোক বা ২০ রাকাত হোক। রাকাতের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের ভিতরে বিভেদ সৃষ্টির কোন অবকাশ নেই কেননা রাসুল (সাঃ) রাকাতের কোন সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেন নাই বরং তা উন্মুক্ত রেখেছেন। কত সুন্দর ভাবে আপনি এই সালাত আদায় করেছেন এটাই মুখ্য, রাকাত সংখ্যা মুখ্য নয়।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী।
শেয়ার করুন
আরও পড়ুন
পাম তেলকে বোতলজাত করে সয়াবিন বলে বিক্রি করছে চট্টগ্রামের অসাধু ব্যবসায়ীরা
চট্টগ্রামে বোতলজাত সয়াবিনের সংকট এখনই কাটছে না, খোলা তেলেই ভরসা
রোজার শুরুতেই লেবু-শসার দাম বাড়ল দ্বিগুণ, বেড়েছে বেগুনের দামও
রমজানে চাঁদাবাজ-ছিনতাইকারী দেখলেই ফোন করুন সিএমপির কন্ট্রোল রুমে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় : আশা ও নিরাশার দোলাচল
কুড়িগ্রাম টেলস : পর্ব-১