ইসলামের মৌলিক ভিত্তি গুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে হজ্ব। এটি একটি পরিশ্রম সাধ্য ইবাদত। হজ্ব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত।
হজ্বের কাজ কাজগুলো করার জন্য প্রচুর মানসিক এবং শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয়। সাথে আর্থিক সংগতির বিষয় তো থাকছেই।
মুসলিমদের জীবনের এক বিশেষ আধ্যাত্বিক সফর হচ্ছে হজ্ব। তাই হজ্বের মূল কাজগুলো সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :
এখানে রয়েছে আল্লাহ্ তায়ালার সুস্পষ্ট নিদর্শন সমুহ, আরো রয়েছে ইবাদাতের জন্যে ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থান। এই ঘরের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে, যে এখানে প্রবেশ করবে সে দুনিয়া-আখেরাত উভয় স্থানেই নিরাপদ হয়ে যাবে; দ্বিতীয় মর্যাদা হচ্ছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের হজ্ব করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যাঁরা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে। আর যদি কেউ এ বিধান অস্বীকার করে তবে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ্ তায়ালা মোটেও সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নন। সূরা আলে-ইমরান: আয়াত: ৯৭।
আসুন এবার গুরুত্বপূর্ণ এ ইবাদতের মূল কাজ গুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিই। হজ্বের ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত গুলো নিম্নরূপ:
হজ্বের ফরয কাজ সমূহ-
▪️ ইহরাম বাঁধা।
▪️উকুফে আরাফা করা। জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর অর্থাৎ যোহর থেকে ঈদুল আজহার দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ্ব সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
▪️আরাফায় অবস্থানের পর, ১০ জিলহজ্ব ভোর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবা ঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা। যাকে তাওয়াফে ইফাদাহ বা তাওয়াফে যিয়ারহ বলা হয়।
▪️ সাফা মারওয়া সা’ঈ করা; হজ্বের ফরজ সা’ঈ করা।
উপরোক্ত ফরয কাজগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে পালন করতে হবে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে এর কোনো একটি বাদ গেলে হজ্ব সম্পন্ন হবে না।
কোনো ক্ষতিপূরণ বা দম দিলেও কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পুনরায় নতুন করে হজ্ব করতে হবে।
হজ্বের ওয়াজিব কাজ সমূহ
▪️মীকাত থেকে ইহরাম করা।
▪️সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।
▪️আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা।
▪️রামি করা; জামরাত সমূহে কংকর নিক্ষেপ করা।
▪️হাদীর পশু যবেহ করা অর্থাৎ দমে শোকর তথা হজ্বের কুরবানী করা। ।
▪️হলক্ব করা; চুল ছেঁটে ফেলা অথবা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করা।
▪️আইয়ামে তাশরীকের রাতগুলোতে মিনায় রাত্রি যাপন করা।
▪️তাওয়াফে বিদা করা; মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজ্ব শেষে মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করা।
পরিস্থিতি বা কারণ সাপেক্ষে কিছু কাজে ছাড় বা ব্যতিক্রম রয়েছে।
ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে হজ্বের কোনো একটি ওয়াজিব যদি বাদ পড়ে যায় তাহলে হজ্ব বাতিল হবে না। তবে এজন্য কাফফারা হিসাবে হারাম এলাকার মধ্যে একটি পশু জবাই করে (দম) সম্পূর্ণ মাংস বিতরণ করা অত্যাবশ্যক।
ওজর ব্যতীত হজ্বের কোনো একটি ওয়াজিব বাদ দেয়া গুনাহের কাজ। দম দিয়ে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর তা‘আলার কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করা বাঞ্চণীয়।
হজ্বের সুন্নাত কাজ সমূহ
▪️ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা।
▪️পুরুষের ক্ষেত্রে দুই খণ্ড সাদা ইহরামের কাপড় পরা।
▪️উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা।
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
▪️৮ জিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা।
▪️মধ্যম ও ছোট জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর দো‘আ পাঠ করা।
▪️তাওয়াফের সময় রমল করা অর্থাৎ প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা।
হজ্বের কোনো একটি সুন্নাত ওজর বশত বাদ দিলে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়ে গেলে অসুবিধা নেই। দম দিতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে সুন্নাত বাদ দেওয়া মন্দ কাজ।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী।
হজ্ব ও হজ্বের মূল কাজ
শেয়ার করুন
ইসলামের মৌলিক ভিত্তি গুলোর অন্যতম একটি হচ্ছে হজ্ব। এটি একটি পরিশ্রম সাধ্য ইবাদত। হজ্ব পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত।
হজ্বের কাজ কাজগুলো করার জন্য প্রচুর মানসিক এবং শারীরিক শক্তি প্রয়োজন হয়। সাথে আর্থিক সংগতির বিষয় তো থাকছেই।
মুসলিমদের জীবনের এক বিশেষ আধ্যাত্বিক সফর হচ্ছে হজ্ব। তাই হজ্বের মূল কাজগুলো সম্পর্কে আমাদের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :
এখানে রয়েছে আল্লাহ্ তায়ালার সুস্পষ্ট নিদর্শন সমুহ, আরো রয়েছে ইবাদাতের জন্যে ইবরাহীমের দাঁড়ানোর স্থান। এই ঘরের বিশেষ মর্যাদা হচ্ছে, যে এখানে প্রবেশ করবে সে দুনিয়া-আখেরাত উভয় স্থানেই নিরাপদ হয়ে যাবে; দ্বিতীয় মর্যাদা হচ্ছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে এই গৃহের হজ্ব করা সেই সব মানুষের কর্তব্য যাঁরা সফর করার আর্থিক সামর্থ্য রাখে। আর যদি কেউ এ বিধান অস্বীকার করে তবে তার জেনে রাখা উচিত, আল্লাহ্ তায়ালা মোটেও সৃষ্টিকুলের মুখাপেক্ষী নন। সূরা আলে-ইমরান: আয়াত: ৯৭।
আসুন এবার গুরুত্বপূর্ণ এ ইবাদতের মূল কাজ গুলো সম্পর্কে কিছুটা ধারণা নিই। হজ্বের ফরয, ওয়াজিব ও সুন্নাত গুলো নিম্নরূপ:
হজ্বের ফরয কাজ সমূহ-
▪️ ইহরাম বাঁধা।
▪️উকুফে আরাফা করা। জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ সূর্য হেলার পর অর্থাৎ যোহর থেকে ঈদুল আজহার দিন অর্থাৎ ১০ জিলহজ্ব সুবহে সাদিক পর্যন্ত যেকোনো সময় আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
এ সময়ের মধ্যে অতি অল্প সময়ও আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে ফরজ আদায় হয়ে যাবে।
▪️আরাফায় অবস্থানের পর, ১০ জিলহজ্ব ভোর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত যেকোনো সময় কাবা ঘর তাওয়াফ বা সাতবার প্রদক্ষিণ করা। যাকে তাওয়াফে ইফাদাহ বা তাওয়াফে যিয়ারহ বলা হয়।
▪️ সাফা মারওয়া সা’ঈ করা; হজ্বের ফরজ সা’ঈ করা।
উপরোক্ত ফরয কাজগুলো ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নির্দিষ্ট স্থানে ও সময়ে পালন করতে হবে। ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে এর কোনো একটি বাদ গেলে হজ্ব সম্পন্ন হবে না।
কোনো ক্ষতিপূরণ বা দম দিলেও কাজ হবে না। এ ক্ষেত্রে হজ্ব বাতিল হয়ে যাবে। পরবর্তীতে পুনরায় নতুন করে হজ্ব করতে হবে।
হজ্বের ওয়াজিব কাজ সমূহ
▪️মীকাত থেকে ইহরাম করা।
▪️সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করা।
▪️আরাফা থেকে মিনায় ফেরার পথে মুজদালিফায় রাত্রি যাপন করা এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত অবস্থান করা।
▪️রামি করা; জামরাত সমূহে কংকর নিক্ষেপ করা।
▪️হাদীর পশু যবেহ করা অর্থাৎ দমে শোকর তথা হজ্বের কুরবানী করা। ।
▪️হলক্ব করা; চুল ছেঁটে ফেলা অথবা মাথা মুণ্ডন করে ইহরাম সমাপ্ত করা।
▪️আইয়ামে তাশরীকের রাতগুলোতে মিনায় রাত্রি যাপন করা।
▪️তাওয়াফে বিদা করা; মক্কাবাসী ছাড়া অন্যরা হজ্ব শেষে মক্কা ত্যাগের পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করা।
পরিস্থিতি বা কারণ সাপেক্ষে কিছু কাজে ছাড় বা ব্যতিক্রম রয়েছে।
ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে হজ্বের কোনো একটি ওয়াজিব যদি বাদ পড়ে যায় তাহলে হজ্ব বাতিল হবে না। তবে এজন্য কাফফারা হিসাবে হারাম এলাকার মধ্যে একটি পশু জবাই করে (দম) সম্পূর্ণ মাংস বিতরণ করা অত্যাবশ্যক।
ওজর ব্যতীত হজ্বের কোনো একটি ওয়াজিব বাদ দেয়া গুনাহের কাজ। দম দিয়ে মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর তা‘আলার কাছে অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা প্রার্থণা করা বাঞ্চণীয়।
হজ্বের সুন্নাত কাজ সমূহ
▪️ইহরাম বাঁধার আগে গোসল করা।
▪️পুরুষের ক্ষেত্রে দুই খণ্ড সাদা ইহরামের কাপড় পরা।
▪️উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করা।
লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক; লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
▪️৮ জিলহজ্ব যোহর থেকে ৯ জিলহজ্ব ফজর পর্যন্ত মিনায় অবস্থান করা।
▪️মধ্যম ও ছোট জামরায় কংকর নিক্ষেপের পর দো‘আ পাঠ করা।
▪️তাওয়াফের সময় রমল করা অর্থাৎ প্রথম তিন চক্কর সৈনিকের মতো বীরদর্পে চলা।
হজ্বের কোনো একটি সুন্নাত ওজর বশত বাদ দিলে বা অনিচ্ছাকৃতভাবে বাদ পড়ে গেলে অসুবিধা নেই। দম দিতে হবে না। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে সুন্নাত বাদ দেওয়া মন্দ কাজ।
লেখক: প্রাবন্ধিক ও সমাজকর্মী।
শেয়ার করুন
আরও পড়ুন
‘ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী’ ইমরানের গ্রেফতারের পরও আতঙ্ক কাটছে না চন্দ্রগঞ্জবাসীর
কমার্স কলেজের ঘটনায় ছাত্রদল-বাম সংগঠনগুলোর ‘সমন্বিত অপতৎপরতা’ দেখছে শিবির
হাতিয়ায় যাত্রীবাহী ট্রলারডুবিতে এখনও ৬ জন নিখোঁজ, একজনের মরদেহ উদ্ধার
চট্টগ্রাম রিপোর্টার্স ফোরামের নতুন কমিটি : সভাপতি মনসুর, সম্পাদক মুরাদ
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হঠাৎ ১২৫০ বাংলাদেশি শিক্ষককে চাকরিচ্যুত, বহাল রোহিঙ্গা শিক্ষকরা
চট্টগ্রামের আরও ২০ মালিক ফিরে পেল হারিয়ে যাওয়া মোবাইল