১৯শে জুন, ২০২৫

চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেফতারের পর জামিনে বের হয়ে সাংবাদিককে হেনস্তা ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকি

শেয়ার করুন

অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে বের হয়ে সাংবাদিককে লোকজন নিয়ে হেনস্তা এবং নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছেন চান্দগাঁও থানায় দায়ের হওয়া একটি চাঁদাবাজি মামলার অন্যতম আসামি আবুল বশর এবং তার স্ত্রী। ভুক্তভোগী সাংবাদিক ইলিয়াছ ইমরুল স্থানীয় ‘চট্টগ্রাম সমাচার’ পত্রিকায় কর্মরত।

আজ বুধবার (২১ মে) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের চান্দগাঁও থানার কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় মোহরা পুলিশ বক্সের আইসি কাজী মনিরুল ইসলাম তাৎক্ষণিক একটি ফোর্স পাঠিয়ে ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করেন।

জানা গেছে, এদিন বিকালে মোহরা পুলিশ বক্সের আয়োজনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ এবং মাদকের বিরুদ্ধে উঠান বৈঠক ছিল। আইসি মনিরুল ইসলামের দাওয়াতে সাংবাদিক ইলিয়াছও সেখানে অংশ নেন। উঠান বৈঠক শেষে সাংবাদিক ইলিয়াছ পাশের একটি ফুলকলি নামের একটি বেকারিতে প্রবেশ করেন। এর দুয়েক মিনিট পর আবুল বশর এবং তার স্ত্রী সেখানে উপস্থিত হয়ে কেন চাঁদাবাজির সংবাদ করেছেন তা জানতে চান। সাংবাদিক ইলিয়াছ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সংবাদ করেছেন বললে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। এ সময় সাংবাদিকের হাত ধরে টানাটানি শুরু করলে উপস্থিত ম্যানেজার-কর্মচারী এবং কাস্টমাররা প্রতিবাদ করে তাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেন। এরপর বেশ কিছু লোকজন নিয়ে আবুল বশর এবং তার স্ত্রী ফিরে এসে ফুলকলিতে ভাঙচুর এবং ম্যানেজার-কর্মচারীদের মারধর করার হুমকি দিয়ে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে।

সাংবাদিক ইলিয়াছ ইমরুল মহানগর নিউজকে বলেন, আবুল বশর তার স্ত্রীসহ প্রায় বেশ কিছু লোকজন নিয়ে ফুলকলির সামনে অবস্থান করলে আমি মোহরা পুলিশ বক্সের আইসিকে ফোন করে জানাই। তিনি তাৎক্ষণিক একটি ফোর্স পাঠিয়ে আমাকে উদ্ধার করে পুলিশ বক্সে নিয়ে যান। আবুল বশররা সেখানেও গিয়ে আমাকে হেনস্তার চেষ্টা করেন। পুলিশের সামনে কোনো রকম তথ্য প্রমাণ ছাড়া আমাকে নারী নির্যাতন এবং কুপ্রস্তাবে ফাঁসানোর হুমকি দেন।

এমন ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন কিনা জানতে চাইলে ভুক্তভোগী এই সাংবাদিক বলেন, আমি আগামীকাল চান্দগাঁও থানায় অভিযোগ দায়ের করবো। আমি এখন নিরাপত্তাহীনতায় আছি। যেকোনো সময় আমার ওপর অ্যাটাক হতে পারে। আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

সাংবাদিককে উদ্ধারের বিষয়ে জানতে চাইলে মোহরা পুলিশ বক্সের আইসি কাজী মনিরুল ইসলাম বলেন, আটকে রাখার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক একটি ফোর্স পাঠিয়ে ওনাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবাই চলে গেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মার্চ চান্দগাঁও থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনের নামে একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মো. লোকমানসহ চারজন (যার মামলা নম্বর- ২৬)। মামলার ১ নম্বর আসামি গ্রেফতার হলেও আবুল বশরসহ অন্যান্য আসামিরা গ্রেফতার হচ্ছিল না। মামলা তুলে নিতে আবুল বশরসহ অন্য আসামি বিপ্লব বড়ুয়া, রাসেল, আলমঙ্গীর, জুয়েল বাদীকে চাপ প্রয়োগ করছিলেন। সাংবাদিক ইলিয়াছ ইমরুল চট্টগ্রাম সমাচার পত্রিকায় গত ৩০ এপ্রিল “চান্দগাঁওয়ে চাঁদাবাজি মামলার আসামি বশরের প্রকাশ্য চাঁদাবাজি, নিরব পুলিশ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করার পর নড়েচড়ে বসে চান্দগাঁও থানা পুলিশ। এরপর ৮ মে (বহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৫টার সময় কাপ্তাই রাস্তার মাথা এলাকা থেকে বশরকে গ্রেফতার করে। পরেরদিন ৯ মে আবুল বশরকে আদালতে সোপর্দ করলে আদালত কারাগারে প্রেরণ করেন।

সে সময় মামলার বাদী মোহাম্মদ লোকমান গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রথম থেকেই এজাহার ভুক্ত আসামি বিপ্লব বড়ুয়া, রাসেল, আলমঙ্গীর, জুয়েলসহ তাদের সহযোগিরা আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বারবার হুমকি দিয়ে আসছে। আমি এখন আতঙ্কিত বোধ করছি। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের ওপর হামলা হতে পারে। নিজের এবং পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে রাঙ্গুনিয়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেছি। আমি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

আবুল বশরকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করার পরও মামলা তুলে নিতে চাপ প্রয়োগ করে তার স্ত্রী এবং সেই মামলার অন্যান্য আসামিরাসহ কাজী নিজাম উদ্দীন নামের কথিত এক সাংবাদিক।

লোকমান জানান, প্রথমে মামলার আইও পরিচয়ে হুমকি-ধমকি দেন, পরে নিজেকে মোহরা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আজম বলে পরিচয় দেন। এরপর তিনি আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তুই কাজটি ঠিক করিস নাই, তুই বাঁচতে পারবি না’ বলে ফোন রেখে দেন।

এরপর নিজের নিরাপত্তা এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চান্দগাঁও থানায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করেন লােকমান।

সূত্রে জানা গেছে, আবুল বশর গত সোমবার (১৯ মে) জামিন পেলেও কারামুক্তি হয় গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ১০টার সময়। কারামুক্তি হতেই সাংবাদিক ইলিয়াছ এবং বাদী লােকমানকে খুঁজতে থাকেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, আবুল বশর আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জামিন নেন। সোমবার আদালতে তুললে তিনি চাঁদাবাজ আবুল বশর নন বলে প্রতারণার আশ্রয় নেন।

বস্তুত, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। এরপর বেশ কিছু গণমাধ্যমে আবুল বশরের ছবিসহ সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর পুলিশ তদন্ত করে চাঁদাবাজির সময় হাতেনাতে গ্রেফতার করে। অন্যদিকে, মামলার বাদী লোকমান নিজেই তাকে চিহ্নিত করেন।

কিন্তু, প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে যথাসময়ে যথাযত তথ্য দিতে না পারায় আদালত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেন।

আরো পড়ুন : চান্দগাঁওয়ে কথিত ‘সাংবাদিক’ কাজী নিজামের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ অটোটেম্পু চালকরা, আছে ঋণখেলাপীসহ ৪ মামলা

আরো পড়ুন : চাঁদাবাজির মামলা তুলে নিতে বাদীকে চাপ, ‘কথিত’ সাংবাদিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে থানায় জিডি

 

 

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন