‘সম্মানির’ নামে নিজের স্ত্রীসহ ১৬ জন মিলে আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সরকারের এমপি ড. আবু রেজা নদভীর বিরুদ্ধে। অভিযোগটি পাওয়ার পর তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। চলমান মামলা থেকে জামিন পাওয়ার পর যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছে দুদক। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন চট্টগ্রামের আদালত।
আজ বুধবার (১৫ জানুয়ারি) দুদক চট্টগ্রামের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক এবং অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাজমুচ্ছায়াদাতের আবেদনের প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক নুরুল ইসলাম এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের সরকারি পিপি কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু বলেন, ১০ কোটি টাকা আত্মসাতের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক তদন্তে নেমেছে। তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্তের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়েছেন দুদক। আদালত আবেদন মঞ্জুর করে অভিযুক্তের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালে আইআইইউসির ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান হয়ে বিশ^বিদ্যালয়ে নিজের একটি বলয় তৈরি করে নদভী। এরপর আইআইইউসি টাওয়ার থেকে সম্মানির নামে নিজের স্ত্রীসহ ১৬ জন মিলে বিশ^বিদ্যালয়ের ১০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে। এমন একটি অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়ার পর তদন্তে নামে সংস্থাটি। সেখানে দেখা যায়, নদভী নিজেই বিধিবহির্ভূতভাবে ১০ লাখ ৯ হাজার টাকা টাওয়ার থেকে নিয়েছেন।
অন্যদিকে, তাঁর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা চৌধুরী ৩ লাখ ৩৭ হাজার, প্রফেসর ড. কাজী দ্বীন মুহাম্মদ ৬ লাখ ৩০ হাজার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার রশিদ আহমদ চৌধুরী ২ লাখ টাকা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. মোহাম্মদ হুমায়ন কবির ৪৫ হাজার, এসিএফডি পরিচালক আফজাল আহমদ ৪৫ হাজার, ড. মুহাম্মদ মাহী উদ্দীন ৪৫ হাজার, রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ শফীউর রহমান ৪৫ হাজার, সরওয়ার আলম ১০ হাজার, জিয়াউর রহমান ১০ হাজার, মুহাম্মদ মাহফুজুর রহমান ১০ হাজার, মিডিয়া উপদেষ্টা খালেদ মাহমুদ ১ লাখ, প্রসেফর মোহাম্মদ সালেহ জহুর ১ লাখ, প্রফেসর ফসিউল আলম ৫০ হাজার এবং প্রফেসর আবদুর রহিম ২৫ হাজার টাকা মাসিক সম্মানি হিসেবে নিয়েছেন। সম্মানির নামে টাওয়ার ব্যবস্থাপনা কমিটির ১৬ জন তিন বছরে ১০ কোটি ১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা নিয়েছেন।
এ ছাড়া নদভী গাড়ি ক্রয়ের জন্য ৬৫ লাখ টাকা ঋণ, ছেলের বিদেশ যাওয়ার জন্য ঋণ, স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য অর্থ খরচ করেছেন ইচ্ছামতো।
প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার উত্তরা থেকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরপর ১১ জানুয়ারি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। পরের দিন ১২ জানুয়ারি সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থানা দায়ের হওয়া ৫টি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দেন আদালত।
আজ সকালে সেই পাঁচটি মামলায় হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে শহরের ৪টি থানায় দায়ের হওয়া ৫টি মামলাও গ্রেফতার দেখানো হয় তাকে। বিচারকরা তাকে গ্রেফতার দেখানোর আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
