আগের সরকারও হুটহাট ভ্যাট বাড়িয়ে সাধারণ জনগণের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করত। নানান কারণে সেই সরকার উৎখাতের পর নতুন সরকারও একই পথ বেছে নিল। অন্তর্বর্তী সরকার শুধু ভ্যাট বাড়িয়ে থেমে থাকেনি, ট্রাকে করে টিসিবির পণ্য বিক্রিও বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে রাজনৈতিক দল ছাড়াও অর্থনীতিবিদ ও ভোক্তারা সরকারের এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করছেন।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দিক থেকে এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তাতে আস্থা রাখতে পারেনি সাধারণ ভোক্তারা।
যদিও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামার প্রভাব ঠেকাতে এবং আইএমএফ এর কাছ থেকে অতিরিক্ত এক বিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্যই সরকার ‘কর আদায়ের এ সহজ পথ’ বেছে নিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, আইএমএফ এর সাথে আলোচনার সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দরকষাকষিতে অদক্ষতার কারণেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির এ সময়ে ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ সরকারকে নিতে হয়েছে।
এদিকে সাধারণ ভোক্তাদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। ভোক্তারা বলছেন, আগের সরকার বাড়িয়েছে একবার, এখন নতুন সরকার এসে বছরের মাঝখানে (অর্থ বছর) বাড়ালো, আবার ঈদ-কোরবান এলে বাড়াবে আরো একবার। এভাবে কি মানুষ বাঁচবে?
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন বলেন, একজন দিনমজুরের দিনে ইনকাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। পরিবারে তিন-চারজন সদস্য থাকলে প্রতিদিন চাল-ডাল ও শাক-সবজি কিংবা তরিতরকারি কিনতে খরচ পড়ে যায় ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। এখন অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে যা থাকে তা দিয়ে কি একটা পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো চিন্তা করা যায়?
বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া রাজিব সেন বলেন, শুধু মাত্র মোবাইলে কথা বলার জন্য ১০০ টাকায় সরকারকে ৫৬ টাকা দিয়ে ফেলি তাহলে কিভাবে হবে?
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ এম এ আকাশ বিবিসি বাংলাকে বলেন, সরকার এভাবে ঢালাও ভাবে শুল্ক কর না বাড়িয়ে সম্পত্তি কর বাড়ালে সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়াতে হতো না।

তিনি এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, নানা রকম সম্পদের ওপর কর দেয়া যেতো। যেমন- একাধিক বাড়ি বা গাড়ীর ক্ষেত্রে কর পুনর্বিন্যাস করতে পারতো। সম্পদের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে করের স্লাব নির্ধারণ করা যেতো। দুর্নীতিবাজ যাদের সম্পদ জব্দ হয়েছে বা অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়েছে সেগুলোকে ব্যবহার করা যেতো।
”এতে করে বৈষম্য কমতো, দুর্নীতি দমন ও লুটপাটকারীদের শাস্তির কর্মসূচি অগ্রসর হতো এবং মুদ্রাস্ফীতিতে কোন বাড়তি চাপ পড়তো না।
এ অর্থনীতিবিদ আরো মনে করেন, সরকারে অন্তর্বর্তীকালীন হওয়ায় দীর্ঘমেয়াদী কোন পরিকল্পনা তারা নিতে পারছেনা, ফলে তাদের এসব সিদ্ধান্তে জন অস্বস্তি বাড়ছে। তাদের উচিত এখন জনগণকে স্বস্তি দিতে সংস্কার কাজগুলো শুরু করে ক্ষমতা নির্বাচিত সরকারকে হস্তান্তর করা।
এদিকে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভ্যাট ট্যাক্স বাড়ানোর ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছে।