১৮ জুলাই দুপুরে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শার্ট ডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নেয় আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকী। শিক্ষার্থীরা মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর এসে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। বিকেল ৪ টা ২০ মিনিটে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর নির্দেশে আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান চৌধুরী, কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, এসরারুল হক এসরাল, টিনু এবং যুবলীগ নেতা নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী ছুরি, চাপাতি, কিরিচসহ আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় তানভীর সিদ্দিকীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়। পরে তানভীরকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গতকাল ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুকুম আসামি করে অন্তত ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন তানভীরের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন, চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, নগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, যুবলীগ নেতা মো. কাইসার, মাহবুব আলম, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, নোমান শরীফ, নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, মো. দেলোয়ার, মো. জালাল, মো. ফরিদ, সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মো. তাহসীন, সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন অভি, এইচ এম মিঠু, নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেকার রশিদ, ওসমান গণি, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জিয়াউদ্দীন আরমান, যুগ্ম সম্পাদক মনির উদ্দিন, যুবলীগ নেতা মো. ফিরোজ, মোঃ জাফর, জাফর আলম, মনছুর আবেদীন, আবুল হাসনাত, মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মিজান সিকদার, যুবলীগ নেতা মো. শোয়াইবসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪০-৫০ জনকে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী দুপুরে অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমগ্র বাংলাদেশ ‘শাট-ডাউন’ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করে পাঁচলাইশ থানার মুরাদপুর এলাকা থেকে মিছিল যোগে নগরের চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করেন। একই দিন বিকেলে ৪ টা ২০ মিনিটের দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সাবেক প্রধানমনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেলের নির্দেশে ও হুকুমে মামলার ৩ থেকে ৩৪ নম্বর আসামিরাসহ অজ্ঞাতনামা ৪০ থেকে ৫০ জন আসামি বেআইনী তাহাদের হাতে থাকা ধারালো চাপাতি, কিরিচসহ মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বহদ্দারহাট ওয়াপদা অফিসের দিক থেকে এসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী তানভীর ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য ছাত্র-ছাত্রীদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপসহ এলোপাতাড়ি গুলি বর্ষণ করে। এতে তানভীর ছিদ্দিকী গুলিবিদ্ধ হয় এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীসহ অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তানভীর ছিদ্দিকীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে চান্দগাঁও থানার ভার্রপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বলেন, চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেলসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : এবার এনবিআর’র টার্গেটে এস আলম, পুরো পরিবারের ব্যাংক হিসাব তলব
মহানগরনিউজ/এআই