১৪ই মার্চ, ২০২৫

বিপদ যেন পিছু ছাড়ছে না এস আলমের, এবার বন্ধ হওয়ার পথে বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র

শেয়ার করুন

বিপদ যেন পিছু ছাড়ছেই না বহুল আলোচিত এবং সমালোচিত চট্টগ্রাম ভিত্তিক এস আলম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল আলম মাসুদের। এবার তার মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেডের আওতায় নির্মিত বাঁশখালী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার পথে। কয়লা সংকটে সর্বসাকুল্যে আর ৫দিন চলবে।

জানা গেছে,  শতভাগ মার্জিন দিয়ে ইসলামী ব্যাংকে ৮টি এলসি খুলেছিল এসএস পাওয়ার-১ লিমিটেড।  কিন্তু, এসএস পাওয়ার লিমিটেডের নামে ইসলামী ব্যাংকে কোনো ঋণ না থাকার পরও প্রতিষ্ঠানটির ৭০ শতাংশের মালিকানা এস আলেমর হওয়াতে ৮টি এলসির মধ্যে ৩টি আটকে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে অপেক্ষায় থাকা তিনটি জাহাজে এক লাখ ৬৮ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাস করতে পারছে না কোম্পানিটি।

এদিকে, আগের বিল না দেয়া পর্যন্ত কয়লা খালাস করবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ইন্দোনেশিয়ান সাপ্লায়ার কোম্পানি। কয়লা খালাস না করায় দৈনিক ৬০ হাজার ডলার করে এখন পর্যন্ত এক মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে এসএস পাওয়ার। শুধু তাই নয়, কোম্পানিটি এসএস পাওয়ার লিমিটেডের সঙ্গে কাজ করবে না বলে হুমকি দিয়েছে।

নিয়ন্ত্রণে থাকাকালীন নামে-বেনামে কোম্পানি খুলে বিভিন্ন সময় শুধু মাত্র ইসলামী ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে এস আলম। অভিযোগ আছে, এই টাকার পুরোটাই বিদেশে পাচার করেছে কোম্পানিটি। এ ধরনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ইতোমধ্যে এস আলমের নিয়ন্ত্রণাধীন বোর্ড ভেঙে নতুন বোর্ড গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। স্থগিত করা হয়েছে সাইফুল আলম মাসুদসহ পুরো পরিবারের ব্যাংক লেনদেন। ফলে এস আলমের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবেও কড়া নজর রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে, নতুন করে বড় এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে শঙ্কা করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম আশঙ্কা করে বলেন, কোনো কারণে ওই কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং আরও বেড়ে যাবে। আমরা তাদেরকে অন্যকোন ব্যাংকে এলসি খোলার পরামর্শ দিয়েছি।

ইসলামী ব্যাংক গুলশান সার্কেল-১ ব্র্যাঞ্চে চলতি হিসাব রয়েছে। সেখানে এলসির বাইরে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার মতো আমানত রয়েছে। সেই হিসাব থেকেও অর্থ ছাড় না করায় চাইনিজ প্রকৌশলীদের বেতন দেওয়াসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোমাত্রার উৎপাদন করলে দৈনিক ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়। আর কয়লার মজুদ রয়েছে মাত্র ৬০ হাজার মেট্রিক টন। সে হিসেবে মাত্র ৫ দিনের কয়লা মজুদ রয়েছে। বর্হিনোঙরে থাকা জাহাজ থেকে কয়লা খালাস করতে না পারলে আগামী সপ্তাহেই বন্ধ হয়ে যাবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ট্যান ঝেলিং এর দাবি, শতভাগ মার্জিন দিয়ে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে ৮টি এলসি খোলা হয়। এরমধ্যে ৫টি এলসির কয়লা খালাস করা হয়েছে, বাকি ৩টির অর্থছাড় করার নির্ধারিত সময় ছিল যথাক্রমে গত আগস্ট মাসের ৬, ১১ ও ২২ তারিখ। সেই অর্থও ছাড় করা হয়নি। আগের কয়লার বিল না পাওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙরে আসা ৩টি জাহাজ ( ১ লাখ ৬৮ হাজার টন) থেকে কয়লা খালাস বন্ধ রেখেছে রফতানিকারকরা। তারা আগের বিল নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কয়লা ছাড় করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার সাপ্লায়ার বেনিফিসিয়ারি ব্যাংকের মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কোনো রকম সাড়া না পেয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার হুমকি দিয়েছে তারা।

তিনি আরও বলেন, এলসি ছাড় না করায় একদিকে যেমন উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তেমনি জাহাজ বসে থাকা দৈনিক ৬০ হাজার ডলার জরিমানা যোগ হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ১ মিলিয়ন ডলারের ওপর জরিমানা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসএস পাওয়ার-১ এর নামে ইসলামী ব্যাংকের কোন শাখায় ঋণ নেই। শুধু ইসলামী ব্যাংক কেন, বাংলাদেশের কোন ব্যাংকে কোন ঋণ নেই। যা ঋণ রয়েছে সবটাই বিদেশি ব্যাংকে। ইসলামী ব্যাংক গুলশান সার্কেল-১ ব্র্যাঞ্চে চলতি হিসাব রয়েছে। সেখানে এলসির বাইরে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকার মতো আমানত রয়েছে। সেই হিসাব থেকেও অর্থ ছাড় না করায় চাইনিজ প্রকৌশলীদের বেতন দেওয়াসহ দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত এস আলম ইসলামী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা বিদেশে পাচার করেছে। এগুলো সব জনগণের টাকা। তাই সরকার পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে না পারলেও দেশে থাকা এস আলমের সম্পত্তি বিক্রি করে গ্রাহকদের আমানতের টাকা পরিশোধ করবে বলেছে ইসলামী ব্যাংক। ফলে এস আলমের মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠানের দিকে নজর রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আরও জানা গেছে, ব্যাংকটির গুলশান শাখা থেকে সাড়া না পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে ১২ আগস্ট। তারপরও কোন সুরাহা করা হচ্ছে না, বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গর্ভণরকে চিঠি দিয়েছে কোম্পানিটি।

প্রসঙ্গত, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুরোপুরি ও রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি গ্যাস সংকটে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। মাস খানেকের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কোন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে অসহনীয় লোডশেডিং ইচ্ছা করলেই দূর করতে পারছে না বিদ্যুৎ বিভাগ।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন