ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে কয়েকদিন ধরে চলছে টানা ভারী বর্ষণ। অবিরাম এই বৃষ্টিপাতে সেখানকার বিভিন্ন জনপদ পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শুধু মাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৭৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে ডুম্বুর জলধারের বাঁধ ভেঙে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারতো, সেই আশঙ্কা থেকে প্রায় ৩১ বছর পর (১৯৯৩) স্লুইচগেট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ডুম্বুর জলাধারের পানি যেমন ভাটির দিকে আসছে, তেমনি ত্রিপুরার হাওড়া, ধলাই, মুহুরি ও খোয়াই নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়িসহ বিভিন্ন জেলা দিয়ে ঢুকছে এবং এর নিম্নাঞ্চল দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।
ফলে এসব অঞ্চলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, এ বন্যায় উক্ত অঞ্চলগুলোর অধিকাংশ এলাকার রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি-বাজার ও দোকানপাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা ফেনী জেলায়। জেলার উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়ার রাস্তা-ঘাট ও ঘর-বসতি এখন পানির নিচে। সদর উপজেলা, সোনাগাজীর অনেক গ্রামও প্লাবিত হয়েছে। বানের পানিতে এখন পর্যন্ত একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছেন।
বিপৎসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি। জেলায় দুইশ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনো পানিবন্দী। বন্যার পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় গতকাল রাত থেকেই বিদ্যুৎ নেই। অনেক ঘরে রান্না করাও সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে বন্যাদুর্গতদের জন্য ত্রাণ সহায়তা নিয়ে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ও বিজিবি স্পিড বোট ও নৌকা নিয়ে মাঠে নেমেছে বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২ আগস্ট প্রবল বৃষ্টিতে পরশুরামের মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধের ১২টি স্থানে ভেঙে যায়। এরপর গত তিন দিনের ভারী বৃষ্টিতে মুহুরী নদীর বাঁধের ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়ে তিন উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে।
অন্যদিকে, কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরের অনেক নিম্নাঞ্চলও প্লাবিত হয়েছে। খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ আরও কিছু জেলার নদ-নদীর পানিও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে।