১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

চট্টগ্রামের সাবেক ৬ এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ মামলা

চট্টগ্রামের ৬ এমপি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ মামলা

চট্টগ্রামের ৬ এমপি মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ৫ মামলা

শেয়ার করুন

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সাবেক ৬ এমপি-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আলাদা ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা হলেন- সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, চট্টগ্রাম (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী এবং চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু।

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি :

চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রথম নিহত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র ওয়াসিম আকরাম হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্দেশদাতা হিসেবে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাউজান আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ এমপির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

গতকাল রোববার (১৮ আগস্ট) রাতে নিহত ওয়াসিমের মা জোসনা আক্তার বাদী হয়ে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ওই মামলায় শেখ হাসিনা ও হাছান মাহমুদ ছাড়াও আরও ১০৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন : সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল :

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা দায়ের করা হয় গত ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) রাতে। এদিন রাতে কলেজ ছাত্র তানভীর সিদ্দিকী হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে হুকুম আসামি করে অন্তত ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন চাচা চাচা মোহাম্মদ পারভেজ।

গত ১৮ জুলাই দুপুরে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘শার্ট ডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নিলে নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় কলেজ ছাত্র তানভীর সিদ্দিকী। সে আশেকান আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল।

দ্বিতীয় মামলা দায়ের করা হয় গতকাল রাতে পাঁচলাইশ থানায়। এ মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তাকেও চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র ওয়াসিম আকরাম হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

সাবেক এমপি ফজলে করিম চৌধুরী :

চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করে অস্ত্র দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগে মামলাটি করা হয়। মামলাটি করেছেন উপজেলার পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজদৌল্লা।

আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজদৌল্লাহ। মামলায় চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মোট ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই রাউজান উপজেলার বাসিন্দা।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, অপহরণ করে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইসলামাবাদ সাকিনের নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনে একটি টিনশেড ঘরে আটকে রাখে। এরপর তার মাথার চুল ও মুখের দাঁড়ি ফেলে বিবস্ত্র করে ছবি তুলে সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীকে দেখানো হয়। এরপর সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করা হয়।

এছাড়া আসামি টনি বড়ুয়া মৃত্যুর হুমকি দিয়ে ৬ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। পরে তার ভাই তিন লাখ টাকা এনে টনির হাতে তুলে দেয়। রাত ৮টার দিকে বাদীকে আসামি শাহাবুদ্দিন আরিফের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর একটি সিএনজিতে বসিয়ে আসামি লিটন দে পুরাতন একটি অস্ত্র আসামি আনোয়ার একটি গুলি এনে ওই সিএনজির পেছনে রাখে। এরপর রাউজান থানার উপপরিদর্শক অজয় দেবনাথ এবং ইলিয়াছ বাদীকে আরেকটি সিএনজি অটোরিকশায় করে থানায় নিয়ে যায়। এসআই অজয় দেবনাথ বাদীকে দিয়ে তার স্ত্রীর কাছে ফোন করিয়ে ১০ হাজার টাকা আদায় করেন।

একইবছরের ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১আতায় রাউজান থানায় অস্ত্রসহ ছবি তুলে অস্ত্র আইনে একটি মামলা করে বাদীকে আদালতে পাঠানো হয়।

বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট সোহাইল লুৎফুল হাসনাত জানান, আদালত মামলার আবেদন আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

সাবেক আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী :

লোহাগাড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে মিছিলে গুলি করে হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংসের অভিযোগ এনে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভীকে প্রধান আসামি করে ৭৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়।

আজ রোববার (১৯ আগস্ট) চট্টগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেন মো. জাহেদ নামে এক ব্যক্তি। তিনি লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের জঙ্গল পদুয়া এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১ আগস্ট লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের নুইরগা ডেবা নামক স্থানে আসামিরা নাচ-গানের আয়োজন করেন। একপর্যায়ে এলাকার সচেতন মহল গিয়ে নাচ-গানের আসর বন্ধ করতে বললে আসামিরা প্রকাশ্যে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেন। গত ৪ আগস্ট উপজেলা সদর বটতলী স্টেশনে চৌধুরী প্লাজার সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিল শুরু হওয়ার প্রাক্কালে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতার মিছিলে উপর্যুপরি গুলি ছুড়ে, আশপাশের দোকান ভাঙচুর, ব্যক্তি মালিকানাধীন ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। ওই দিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে ধাওয়া করে হাসনাত নামের এক যুবককে এলোপাতাড়ি মাথা ও পিঠে কুপিয়ে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম করা হয়।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইমতিয়াজ রেজা চৌধুরী নিশান বলেন, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এফআইআর হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দিয়েছেন।

সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফ :

গত ৪ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর নিউ মার্কেট মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ যাওয়ার সময় ডবলমুরিং এলাকায় ছাত্রদের ওপর গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় এরশাদ নামে একজন গুলিবিদ্ধ এবং তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে ব্যাপক মারধর করে ককটেল বিস্ফোরণ করা হয়।

এ ঘটনায় গত ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) ডবলমুরিং থানায় এম এ লতিফসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ১০০ থেকে ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলায় এম এ লতিফকে গুলি করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে করা হয়।

সেই মামলায় শনিবার (১৭ আগস্ট) সকালে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে আদালতে তুললে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দীন বলেন, ডবলমুরিং থানায় গুলি করে জখম ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার সাবেক সংসদ সদস্য এম এ লতিফের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চু :

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র ওয়াসিম আকরাম হত্যা মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে নির্দেশদাতা হিসেবে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং) আসনের সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন বাচ্চুর নামেও মামলা দায়ের করা হয়।

এ মামলায় শেখ হাসিনা ও মহিউদ্দিন বাচ্চু ছাড়াও অন্যান্য নির্দেশতারা হলেন- সাবেক সড়ক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ব্যরিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ রেজাউল করিম। এর বাইরে  আরও  ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে

আরও পড়ুন : হাসিনা-কাদের-নাছির-নওফেলসহ ১০৮ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে আরেক মামলা

আরও পড়ুন :  আত্মগোপনে থাকা চসিক মেয়র রেজাউল করিমকে অপসারণ

মহানগর/এআই

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন