১৪ই মার্চ, ২০২৫

ফেনী-নোয়াখালী-কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

ফেনী-নোয়াখালী-কুমিল্লায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

শেয়ার করুন

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে এবং ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা দেখছে ফেনী-নোয়াখালী ও কুমিল্লার মানুষ। ইতোমধ্যে পানির নিচে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাটসহ ঘরবাড়ি এবং দোকানপাট। ঘরবাড়ি হারিয়ে এই তিন জেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছেন।

ফেনীর যা অবস্থা 

জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কবলিত ফেনীর উত্তরের তিন উপজেলা ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া। বিপদ সীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি। তিন উপজেলায় দেড় শতাধিক গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করছে।

সরেজিমন দেখা যায় ফুলগাজী উপজেলার সদর ইউনিয়ন, আনন্দপুর, মুন্সীরহাট, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৪০টির বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পরশুরামের মির্জানগর, চিথলিয়া, বক্সমাহমুদ এবং পৌরশহর সহ ৪৫টির বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে রয়েছে। ছাগলনাইয়ার পাঠান নগর, রাধানগর, শুভপুর ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। এসব এলাকায় তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, পুকুর ও ফসলি জমি। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের ঘরের ছাদ ও টিনের চালেও ছুঁয়েছে বানের পানি। আশ্রয় খুঁজছে স্থানীয়রা।

নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি

গত দুইদিনের তুলনায় নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটেছে। ফেনীর মুহুরী নদীর পানি ঢুকে পড়ায় নোয়াখালীর নয়টি উপজেলায় নতুন করে অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘন্টায় ৭১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা আবহওয়া অফিস। এরই মধ্যে নয়টি উপজেলার ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। গ্রামীণ সব সড়ক, ফসলি মাঠ এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ।টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ নয়টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করায় স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন । জেলার ৭টি পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। সব ধরনের গ্রামীণ সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ রয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জেলার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে জেলা প্রশাসন।

নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, ফেনীর মুহুরী নদীর পানি নোয়াখালী প্রবেশ করায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যায় দুর্গতদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

ভারত থেকে হুহু করে পানি ঢুকছে কুমিল্লায়

টানা তিন দিনের বৃষ্টির পাশাপাশি ভারতের ত্রিপুরা থেকে আসা ঢলের পানি মিলে অস্বাভাবিক বেড়েছে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি। প্লাবিত হয়েছে আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা। ইতোমধ্যে ৪ হাজার হেক্টর জমির ফসল পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে গেছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত ১০ বছরের মধ্যে নদীটিতে এত পানি দেখেননি তাঁরা। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের সহস্রাধিক পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে।
আজ সকালে কুমিল্লা গোমতী নদীর আদর্শ সদর উপজেলার বানাশুয়া, পালপাড়া, রত্নবতী, টিক্কারচর, জালুয়াপাড়া, বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, শিমাইলখাড়া, পূর্বহুড়া, নানুয়ার বাজার, মিথলাপুর, গোবিন্দপুর, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর তীর ঘেঁষে আছড়ে পড়ছে ঢেউ। চরাঞ্চলের কয়েক হাজার একর সবজিখেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন।

কুমিল্লা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টা থেকে আজ বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত জেলাটিতে ৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আরও বৃষ্টি হতে পারে।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন