চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি ফের বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬.৩৩ শতাংশ বেড়েছে। ফলে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষণ দেখছে সংশ্লিষ্টরা।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস জানিয়েছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল সময়ে পণ্য আমদানি হয়েছে ৭.৮৭ কোটি টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে পণ্য আমদানি হয়েছিল ৭.৪০ কোটি টন।
তথ্য বলছে, এই সময়ে এসব আমদানি পণ্যের শুল্কায়নযোগ্য মূল্য দাঁড়িয়েছে ৪.২৩ লাখ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৩.৭০ লাখ কোটি টাকার তুলনায় ১৪.৩৫ শতাংশ বেশি।

আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের গতি বুঝতে একটি বড় সূচক হচ্ছে পণ্য চালানের সংখ্যা। এই চালান, অর্থাৎ বিল অভ এন্ট্রি ও বিল অভ এক্সপোর্ট দাখিলও বেড়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। জুলাই-এপ্রিল সময়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসে জমা পড়েছে ২৪.১৫ লাখ বিল অভ এন্ট্রি ও বিল অভ এক্সপোর্ট, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ২১.৮৫ লাখের চেয়ে ১১ শতাংশ বেশি।
আমদানিতেও উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরের ১০ মাসে আমদানি পণ্যের বিল অভ এন্ট্রি দাখিল হয়েছে ৫.৭৩ লাখ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫ লাখ। কাস্টমস কর্মকর্তারা জানান, চলতি অর্থবছরের দশ মাসে দৈনিক গড়ে ১ হাজার ৯১০টি আমদানি পণ্যের বিল অভ এন্ট্রি দাখিল হয়েছে, যা স্থিতিশীল বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।
ব্যবসায়ী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অর্থনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা ডলার সংকট, ঋণপত্র (এলসি) খোলায় জটিলতা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে ধীরগতির প্রেক্ষাপটে চলতি অর্থবছরের দশ মাসের চিত্র অর্থনীতিতে কিছুটা আশাবাদের বার্তা দিচ্ছে।
তারা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ এবং দেশের অভ্যন্তরে মুদ্রানীতি ও রাজস্ব কাঠামোতে কিছু স্থিতিশীলতা ফেরার ফলে বাণিজ্যিক কার্যক্রমে গতি ফিরেছে।
চট্টগ্রাম চেম্বার অভ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, ডলার সংকট ও এলসি-সংক্রান্ত জটিলতা কেটে যাচ্ছে। বেড়েছে আমদানি-রপ্তানি। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক কলম-বিরতিতে আমদানি-রপ্তানি কিছুটা স্থবিরতার মুখে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ইস্যুর দ্রুত সমাধান জরুরি। নইলে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এদিকে আমদানি প্রবৃদ্ধির ফলে বেড়েছে কাস্টমস রাজস্বও। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত দশ মাসে রাজস্ব আয় হয়েছে ৬২ হাজার ৮১৮ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের ৫৫ হাজার ৫২২ কোটি টাকার চেয়ে ১৩.১৪ শতাংশ বেশি।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার সাইদুল ইসলাম বলেন, কাস্টমসের রাজস্ব আয় মূলত আমদানি শুল্ক-নির্ভর। ‘এলসি ও ডলার সংকট কমে আসায় আমাদনি বেড়েছে। এর সুফল পাওয়া গেছে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ে।’
অডিট ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিটের ডেপুটি কমিশনার কাজী রায়হানউজ্জামান বলেন, শুল্ক ফাঁকি কমাতে তাদের কার্যালয় নজরদারি বাড়িয়েছে। অর্থ পাচার ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এসব পদক্ষেপের ফলে রাজস্ব ফাঁকি কমেছে। সঙ্গে চোরাচালান ও জালিয়াতি রোধে প্রচেষ্টার ফলে রাজস্ব আদায় বেড়েছে।’
সূত্র: টিবিএস