গত ২৩ ডিসেম্বর ‘গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি’র একটি প্রতিনিধি দল সরেজমিনে চট্টগ্রামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে চট্টগ্রামে আসেন। এ সময় তারা আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের ‘স্পট’সহ পুরো এলাকা পর্যবেক্ষণ করে ঢাকায় ফিরে যান।
আজ রোববার (২৯ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ড, পরবর্তী পরিস্থিতি পরিদর্শন : পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাব’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলন করে সংগঠনটি।
এ সময় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেছেন, আমরা বিস্মিত হয়েছি এ জন্যই যে, ওই দিনের ঘটনায় মামলা দায়ের ও তদন্তপ্রক্রিয়া সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। মামলাগুলোতে গণহারে আসামি করা হয়েছে। তদন্ত পরিচালনার পদ্ধতি পর্যবেক্ষণ করে আমাদের মনে হয়নি যে, এই হত্যার সঠিক বিচারের প্রশ্নে এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগ আন্তরিক।

তিনি আরও বলেন, আমরা চট্টগ্রামে পরিদর্শন শেষে ঢাকায় ফেরার পরে স্থানীয় থানার একজন এসআই সেবকপল্লীতে গিয়ে হরিজনদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, তারা (হরিজনদের) যদি প্রকৃত অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়, তবে যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে; তাঁদের ছাড়ানোর ব্যবস্থা করবেন।
যদিও ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়ার এ দাবি অস্বীকার করেছেন চট্টগ্রামের পুলিশ। তাঁর এই বক্তব্যকে ‘উস্কানিমূলক’ উল্লেখ করে সিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ ও অপারেশন্স) রইছ উদ্দিন একটি অনলাইন গণমাধ্যমকে বলেন, যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা দায়িত্বশীল লোক। তারা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। এই ধরনের অহেতুক কথাবার্তা বলে একটা বিষয়কে উস্কে দেওয়া উচিৎ নয়। তাদের কাছে যদি সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ থাকে তাহলে তা আমাদের দেওয়া হোক। আমরা তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
তিনি আরও বলেন, এই মামলার আসামিদের ছাড়া কিংবা আটক রাখা এটা কোনো অফিসারের ব্যক্তিগত এখতিয়ার না। এটি অবশ্যই অফিসিয়াল প্রসিডিউর।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, অজ্ঞাতনামা আসামির মধ্যে যে কেউ পরতে পারে, সুতরাং একটা ব্যাপক হয়রানি শুরু হয়েছে। পুলিশের যে গ্রেপ্তার–বাণিজ্য এবং যারা কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতাধর ব্যক্তি, তারা যেকোনো ব্যক্তিকে এটার জন্য হয়রানি করতে পারে, হুমকি দিতে পারে, টাকা আদায় করতে পারে। এগুলো হাসিনা আমলে চলেছে। বিষয়টি পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডের দিন হরিজন কলোনির দুটি মন্দির ও আটটি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনার দুদিন পর ২৯ নভেম্বর পবিত্র জুমার নামাজের পর একদল দুষ্কৃতকারী হরিজন কলোনিতে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এ সংবাদ কোনো মিডিয়ায় আসেনি। হরিজনদের মন্দির ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি।

আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ড ও সংঘাতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত ছয়টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৯০ জনকে নাম উল্লেখ করে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ২ হাজার ৪০০ জনের অধিক ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। প্রায় আড়াই হাজার অজ্ঞাতনামা আসামি থাকার কারণে গ্রেফতার-বাণিজ্য চলার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
হরিজন কলোনির ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের অবস্থা খুবই শোচনীয়। যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা বাদে বেশির ভাগ পুরুষই বাড়ির বাইরে পালিয়ে আছেন বলেও উল্লেখ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি।