আগামী জানুয়ারির মধ্যে এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলার পরিকল্পনা করছে ইসলামী ব্যাংক। আর সেজন্য ব্যাংকটির পুরনো শেয়ারধারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবের আল রাজীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান পর্ষদ।
জানা গেছে, পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ারের মধ্যে শিংহভাগই চট্টগ্রাম ভিত্তিক বিতর্কিত শিল্পগ্রুপ এস আলমের কাছে। সেসব শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায়ের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যদিও এস আলম ঋণের নামে ব্যাংকের ১৭টি শাখা থেকে মোট ৮০ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেছে। সে জন্য নতুন করে আরও শেয়ার ইস্যু করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
আজ সোমবার (১৮ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন। ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, এস আলম শুধু টাকা নেয়নি, আন্তর্জাতিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে ব্যাংকের যে সম্পর্ক ছিল সেটাও ধ্বংস করে দিয়েছে।

এদিকে, সংবাদ সম্মেলনে এস আলমকে মরতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, ব্যক্তি এস আলম আর প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ এক বিষয় নয়। আমরা এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকোর মতো কোনো প্রতিষ্ঠানই বন্ধের পক্ষে নই। কারণ, সব প্রতিষ্ঠান জাতীয় সম্পদ। তবে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৬০ কোটি ৯৯ লাখ ৯০ হাজারের ৬৬৮টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা-পরিচালকের কাছে দশমিক ১৮ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগককারীর কাছে ৭৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারী ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে আছে ৭ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার। আর এস আলম গ্রুপের কাছে রয়েছে ১৩২ কোটি ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৮টি শেয়ার। অর্থাৎ, সিংহভাগ শেয়ারের মালিকই এস আলম।
যদিও ২০১৭ সালে যখন এস আলম নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার আগে ব্যাংকের ৫০ শতাংশের বেশি মালিকানা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে ছিল। আর বর্তমানে সেটি কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশে।
সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময়ের দেশের শীর্ষ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসিকে ২০১৭ সালে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মালিকানা ও ব্যবস্থাপনার নিয়ন্ত্রণ নেয় সদ্য বিদায় নেওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠ এস আলম গ্রুপ। এরপর সাড়ে সাত বছরে নামে-বেনামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এই ব্যবসায়ী গোষ্ঠী ও এর স্বার্থসংশ্লিষ্ট রাজশাহীর নাবিল গ্রুপ। এই অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের এক-তৃতীয়াংশ।
এর আগে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একইসঙ্গে ইসলামী ব্যাংকে এস আলম পরিবারের সদস্য ও প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
