১৪ই মার্চ, ২০২৫

অনুপম সেনের পদত্যাগ ঠেকাতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, বিবৃতিকারীদের বহিষ্কারের দাবি

শেয়ার করুন

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের মদতপুষ্ট ভিসিদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করে ছাত্র-ছাত্রীরা। অধিকাংশ ভিসিরা ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। এর বাইরে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে বাঁধা দেওয়ায় বহু স্কুল-কলেজের প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও শিক্ষককে জোরপূর্বক পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছেন। অনেক শিক্ষককে লাঞনা করতেও দেখা গেছে। সন্তানের বয়সী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পাওয়া এমন অপমাণে অনেক শিক্ষকের যেমন হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. অনুপম সেনের পদত্যাগের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি বিবৃতি প্রকাশ পায়। এরপর শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ওই বিবৃতিকে প্রোপাগান্ডা আখ্যা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই চান, ড. অনুপম সেনই ভিসি পদে থাকুক।

এদিকে, ড. অনুপম সেনের পদত্যাগ ঠেকাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর সমর্থন জানিয়ে চট্টগ্রামের বিশিষ্টজনরা তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তারা বিবৃতিকারী শিক্ষার্থীদের অনুপম সেন সম্পর্কে জানতে বইপুস্তক পড়ার অনুরোধ জানান। এই বিশ^বিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য ওঁনার ভূমিকা কি সেগুলো জানার অনুরোধ জানান।

আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইসি ক্যাম্পাসে জড়ো হতে থাকে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। পরে বেলা ১১টার দিকে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ড. অনুপম সেনের পদত্যাগ ঠেকাতে এবং বিবৃতি দেওয়া শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। দুপুর ১২টার সময় ভিসি নিজেই বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের শান্ত করেন।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো ব্যক্তি অনুপম সেনকে বাঁচাতে আসিনি, আমরা আমাদের প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গার্জিয়ানকে বাঁচাতে এসেছি। আমরা চাই না, আমাদের প্রিয় স্যার পদত্যাগ করুক।

তারা আরও বলেন, যেখানে বিশ^বিদ্যালয়ের ৯৯ ভাগ শিক্ষার্থী চায় সেন স্যারই ভিসি থাকুক। সেখানে শুধু মাত্র ৮-১০ জন ছাত্রের এমন সিদ্ধান্ত কখনও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর ভিত্তিহীন দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছি এবং আমাদের দুটো দাবি তুলে ধরেছি।

বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের দুই দফা দাবি হলো :

১. আগামীকাল (বুধবার) দুপুর ১২টার মধ্যে ভিসির পদত্যাগের দাবির পক্ষে বিবৃতি দেওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষমা চাইতে হবে।
২. না হয়, তাদেরকে বহিষ্কার করতে হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনুষদের ছাত্রদের পক্ষ হতে’ এই রূপ মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে তারা যে প্রোপাগান্ডা তৈরি করার চেষ্টা চালাচ্ছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানে আঘাত আনছে। এই মিথ্যা প্রচারনা থেকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে যেন ভবিষ্যতে খারাপ পরিস্থিতি তৈরি করতে ভয় পায়।

সিনিয়র সাংবাদিক ও কবি কামরুল হাসান বাদল তার ফেসবুকে লেখেন, এ দেশে প্রতিদিন হাজার হাজার যদু-মদুর জন্ম হয়। আর একজন অনুপম সেনের জন্ম হয় কয়েকশ বছরে।

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের স্টাফ রিপোর্টার আজহার মাহমুদ লেখেন, অনুপম সেন স্যারের দোষ একটাই। তিনি রাজধানী না গিয়ে চট্টগ্রামে থেকে গেছেন। ঢাকায় থাকলে তিনি হয়তো এক নম্বর বুদ্ধিজীবী থাকতেন। আমাদের পরিমাপের মাপকাঠি একটাই। রাজধানীতে থাকা লাগবে…।

সতুপা বড়ুয়া নামের একজন কলেজ শিক্ষক বলেন, যেসব- শিক্ষার্থী শুধু মাত্র নম্বর আর সার্টিফিকেটের জন্য পড়াশোনা করে, শিক্ষকদের সম্মান করেনা তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। নিজের চোখে তো কত কিছুই দেখছি। তাই তালিকার প্রথমে স্যার এর নাম (ড. অনুপম সেন) লিখতে তাদের হাত কাঁপেনি। তারপরও স্যার এর অবস্থান নষ্ট করতে পারবে না ওরা হয় তো এবার মাঠে নামবার সময় ঘনিয়ে এসেছে।

বিশ^বিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সায়েম মাহমুদ বলেন, দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন স্যারকে পদত্যাগ করানোর ব্যাপারে যে লিখিত বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অনুষদের ছাত্রদের পক্ষে’, এরূপ মিথ্যা বিবৃতি দিয়ে তারা যে প্রোপাগান্ডা তৈরি করার চেষ্টা করেছে তা অসমর্থনযোগ্য। আমি বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই, এমন ষড়যন্ত্র যেন অচিরেই ধ্বংস হয়। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

ভিসির পদত্যাগের দাবিকে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা আখ্যা দিয়ে ‘প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি’ একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। বিবৃতিতে বলা হয়, দেশ বরেণ্য সমাজ বিজ্ঞানী ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত ভিসি, ড. অনুপম সেন স্যারকে পদত্যাগ করানোর ব্যাপারে যে লিখিত বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণ্য। প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি থেকে আশা ব্যক্ত করছি যে, এমন ষড়যন্ত্র যেন অচিরেই ধ্বংস হয় এবং ষড়যন্ত্রকারীদের যথাযথ বিচারের আওতায় আনা হয়।

প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ এক বিবৃতিতে বলেন, স্যারের পদত্যাগের যে লিখিত বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয় ও ঘৃণিত। আমরা প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী পরিষদ এহেন কমর্কাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন