গতকাল বুধবার রাত থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ঝরেছে। ফলে আবারও বন্দর শহর চট্টগ্রামের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল কোমরসমান পানিতে ডুবে যায়। অন্যদিকে, হালদা, ফেনী ও মহুরী নদীর বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চট্টগ্রাম জেলার অন্তত ৯টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে উদ্ধারের জন্য আকুতি জানাচ্ছেন।
আজ সকালে দেখা যায়, নগরীর শুলকবহর, মুরাদপুর, দুই নম্বর গেট, মোহাম্মদপুর, জাকির হোসেন রোড, ওয়াসা রেবতী মোহন সড়ক, প্রবর্তক মোড়, কাতালগঞ্জ, ডিসি রোড, ফুলতলা, কে বি আমান আলী রোড, চকবাজার, বাকলিয়া, দেওয়ানহাট, মোগলটুলী, পাঠানটুলী, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ রোড, হালিশহর ওয়াপদাসহ বিভিন্ন এলাকা কোমরসমান পানিতে ডুবে যায়। ফলে অধিকাংশ সড়কে যানবাহন চলাচল টানা কয়েক ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এতে অফিসগামী যাত্রীদের পানিতে ভিজে ভিজে অফিস কিংবা নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।

সকালে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ১৪১.৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। বৃষ্টিপাত আরও অন্তত ৪৮ ঘণ্টা অব্যাহত থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এদিকে, হালদা, ফেনী, মুহুরী নদীর পানি প্রবেশ করে এরই মধ্যে মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, ফটিকছড়ি, বাঁশখালী, পটিয়া, বোয়ালখালী, রাউজান, কর্ণফুলী ও হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে মিরসরাই ও ফটিকছড়িতে ভয়াবহ অবস্থা দেখে গেছে। মিরসরাইয়ের ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ফেনী নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে এক তলা ভবন সমান পানি দেখা গেছে। সেখানকার মানুষ জানিয়েছেন, পানি ক্রমশ বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সীতাকুণ্ড, মিরসরাই এবং ফটিকছড়ি উপজেলার ২০ হাজার ১৭৫ পরিবার দুর্যোগ কবলিত। এসব পরিবারের প্রায় ৯৫ হাজার ৯শ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খবর নিয়ে জানা গেছে, ফটিকছড়িতে বাড়ি-ঘর ডুবে পানিবন্দি হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ২০ হাজার পরিবারের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে রয়েছে উপজেলার মাইজভান্ডার-রাউজান সড়কও। ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে উপজেলার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও যুবকরা। প্রশাসনের পরামর্শে এবং সহযোগিতায় উদ্ধার কাজ এবং ত্রাণ বিতরণ করছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোজ্জামেল হক চৌধুরী বলেন, ফটিকছড়ি দিয়ে প্রবাহিত হালদা নদী ও বেশকিছু খালের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। লাখো মানুষ পানিবন্দি। আমরা ১৮টি ইউনিয়নের জন্য ১৮ জন কর্মকর্তা নিয়োগ করেছি। লোকজনকে আশ্রয় দিতে আমরা ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি।
মিরসরাই উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে ১২ হাজার পানিবন্দি পরিবারের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি উপজেলার করেরহাট এবং ধুম ইউনিয়নে। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙে কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন মৎস্য চাষিরা। এই উপজেলায় ৩০টি নৌযান উদ্ধার কার্যক্রম চালাচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরিষদের প্রশাসক মাহফুজা জেরিন জানান, মিরসরাইয়ে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। গ্রামীণ পর্যায়ে এখনো কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা তিনি জানাতে পারেননি। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত ১৭০০ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৬টি উপদ্রুত ইউনিয়নে ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার জন পানিবন্দি আছে। স্থানীয় যুবসমাজ তাদের উদ্ধার কাজ শুরু করেছে।
এছাড়া পটিয়া, বোয়ালখালী এবং কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন জায়গা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়। তথ্য অনুযায়ী, পটিয়া উপজেলার ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড মিলিয়ে ১৮ স্থানে ৬৯৪৬ পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। বোয়ালখালী উপজেলায় ইউনিয়ন, পৌরসভা ও ওয়ার্ড মিলিয়ে ৩ জায়গায় ১০০ পরিবারের প্রায় ৭০০ মানুষ পানিবন্দি আছে। কর্ণফুলী উপজেলায় ১০০ পরিবারের প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন।
তবে দুর্ঘটনার আশংকায় নিরাপত্তার জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে কিছু এলাকায়। বেশিরভাগ সমস্যা দেখা দিয়েছে বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে।