গত ৫ আগস্টের পর থেকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আর্থিক ব্যবস্থাপনা পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। আটকে আছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ফলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে অনেকটা স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন থেকে মেয়র এম রেজাউল করিমকে তার পদ থেকে অপসারণ করে বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
সোমবার (১৯ আগস্ট) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
এর আগে গত ১৪ আগস্ট (বুধবার) মেয়র ও অন্যান্য প্যানেল মেয়রদের অনুপস্থিতিতে কর্পোরেশনের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসায় চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলামকে ‘আর্থিক ও প্রশাসনিক পূর্ণ ক্ষমতা’ দিয়েছিল স্থানীয় সরকার বিভাগ।

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। সেদিন থেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীও। গত ১৫ দিন ধরে নিজ কার্যালয়ে আসছেন না। এমনকি তিনি তার বাড়িতেও নেই। বন্ধ রয়েছে তার মোবাইল ফোন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তারা নিয়মিত অফিস করলেও মেয়রের অনুপস্থিতিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে আছে।
মেয়রের অনুপস্থিতিতে কী ধরনের অসুবিধা তৈরি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, স্যার ছাড়া প্রকল্পের এস্টিমেট ফাইল সই হবে না, টেন্ডার প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে, কোনো ধরনের প্রকিউরমেন্ট করা যাবে না। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, জরুরি যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে স্যারের অনুমোদন ছাড়া কোনো কাজই হবে না।
যদিও এরই মধ্যে অধিকাংশ কাউন্সিলর কার্যক্রম শুরু করেছেন। তারা পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, মশার ওষুধ ছিটানো, জন্মনিবন্ধনসহ কিছু কিছু সেবা কার্যক্রম চালু করেছেন বলে জানা গেছে।
চসিকের প্যানেল মেয়র ও ১২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফরোজা বেগম বলেছেন, আমাদের অনেক কাউন্সিলর কার্যালয়ে ফিরেছেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বাকিরাও কিছুদিনের মধ্যে ফিরবেন।
সূত্রে জানা গেছে, মেয়র ও কাউন্সিলররা আত্মগোপনে চলে যাওয়ার সুযোগে চসিকের ৩২টি কাউন্সিলর কার্যালয়ে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় ৪ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর বাইরে চসিকের অনেক প্রকল্প থেকে কয়েক কোটি টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।

প্রসঙ্গত, স্থানীয় সরকার বিভাগের জারি করা প্রজ্ঞাপনে চসিক মেয়রসহ দেশের আরও ১২টি সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে অপসারণ করে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই ১২টি সিটি করপোরেশন হলো :
ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, গাজীপুর ও ময়মনসিংহ।
মেয়রের পদে যাদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হলো :
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মহ. শের আলীকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মো. মাহমুদুল হাসানকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনারকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, খুলনার বিভাগীয় কমিশনারকে খুলনা সিটি করপোরেশন, রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনারকে রাজশাহী সিটি করপোরেশন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে সিলেট সিটি করপোরেশন, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারকে বরিশাল সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (বার্ড)মহাপরিচালককে (অতিরিক্ত সচিব) কুমিল্লা সিটি করপোরেশন, রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে রংপুর সিটি করপোরেশন, গাজীপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে গাজীপুর সিটি করপোরেশন এবং ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনারকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক করা হয়েছে।
আরও পড়ুন : শেখ হাসিনা-নওফেলের নির্দেশে খুন–আসামি সুমন, রনি, টিনুসহ ৩৪
মহানগর/এআই