১৪ই মার্চ, ২০২৫

৬ বছরে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ হলো ৭৩%, সুফল নিয়ে সংশয় চসিক মেয়রের

ছবি : সংগৃহীত

শেয়ার করুন

২০১৭ সালে ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনর্খনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক পাঁচ হাজার ৬১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়নের অনুমোদন পায় সিডিএ। পরের বছর ২০১৮ সালের ৯ এপ্রিল প্রকল্পটি সম্পাদনের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সঙ্গে সিডিএ’র সমঝোতা চুক্তি সই হয়। এর মধ্যে প্রকল্প সংশোধন হয়ে আকার ও ব্যয় বেড়েছে একবার। ফলে ৬ বছরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭৩ শতাংশ। এতেও নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পায়নি। ফলে এর সুফল নিয়ে অনেকটা সংশয় প্রকাশ করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেছেন, সব সংস্থা একসঙ্গে কাজ করে পরিকল্পিত নগরায়ন করতে না পারলে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেও জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব হবে না।

আজ মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর টাইগার পাসে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ে মেয়রের সঙ্গে বসেছিলেন সিডিএ ও প্রকল্প সম্পাদনকারী সংস্থা সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের কর্মকর্তারা। এ সময় চসিক মেয়রকে ভৌতিক কাজের ৭৩ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

সভায় প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনকে অবহিত করে বলেন, প্রকল্পের ভৌতিক কাজের অগ্রগতি এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৩ শতাংশ। খাল দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, খালগুলো পুনরুদ্ধার করা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা খাল খনন করলেও পানি তো নালার মাধ্যমে খালে আসতে হবে। যততত্র পলিথিন, ময়লা ফেলে নালা ভরাট করে ফেললে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। এতে শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে। কর্ণফুলীর তলদেশও এ কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

প্রকল্পের কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা কম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে পাহাড় রক্ষাও জরুরি। একটি চক্র বর্ষার আগে পাহাড়ে এমনভাবে মাটি কাটে, যাতে বৃষ্টি হলে পানির সঙ্গে পাহাড় ধসে যায়। এ মাটি পরে নালায় গিয়ে নালা জ্যাম করে ফেলে। এজন্য পাহাড় রক্ষা করতে হবে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়েও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২ মে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শাহ আলী জানিয়েছিলেন, তখন পর্যন্ত জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের তিন চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ সোয়া ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

সেই তথ্যের সঙ্গে হালনাগাদের গরমিলের বিষয়ে জানতে চাইলে বর্তমান প্রকল্প পরিচালক লেফট্যানেন্ট কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের আকার বেড়েছে, ব্যয়ও বেড়েছে। সর্বশেষ ভৌতিক অগ্রগতি ৭২ শতাংশের চেয়ে কিছু বেশি। খসড়া হিসেবে সেটাকে আমরা ৭৩ শতাংশ বলছি।

সভায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, সিডিএর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প দ্রত এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে সিডিএ ৫৭ টি খালের মধ্যে ৩৬ টি খালের কাজ করছে। বাকি ২১টি খাল আদৌ বেঁচে আছে কি না, থাকলে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায়, সেটা জানতে বাকি খালগুলো নিয়ে সমীক্ষা প্রয়োজন। জলাবদ্ধতা নিরসনসহ জনস্বার্থে সব বিষয়ে সিটি করপোরেশন ও সিডিএ একযোগে কাজ করবে।

সভায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, সিডিএ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বন্দরসহ সবগুলো সংস্থাকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। কেবল হাজার-হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্প করে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব নয়। বরং প্রকল্পের পাশাপাশি জনসচেতনতা, পরিবেশ রক্ষা ও পরিকল্পিত নগরায়নও জরুরি।

খাল-নদী রক্ষায় আইনের প্রয়োগ প্রয়োজন মন্তব্য করে মেয়র বলেন, আমি বাকলিয়ায় কৃষিখালে গিয়ে দেখলাম, খালটা যেন ডাম্পিং স্টেশন হয়ে গেছে। অথচ বাকলিয়া এলাকার জলাবদ্ধতার পানি নিরসনে খালটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চাক্তাই খালেরও অনেক স্থানে সাত-আটতলা বিল্ডিং হয়ে গেছে। অন্যান্য খালেও দখল ও বর্জ্য নিয়ে একই সমস্যা, যা শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। কর্ণফুলীকেও হত্যা করা হয়েছে। এজন্য আমার মনে হয় প্রয়োজনে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমি, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফরহাদুল আলম এবং সিডিএর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ এ এম. হাবিবুর রহমান।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন