১৬ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম শহরের মুরাদপুর এলাকায় প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল যুবলীগ নেতা ফিরোজ। ওই দিন ১৬ বছর বয়সী দোকান কর্মচারী সায়মান প্রকাশ মাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সেই সময় ফিরোজের শটগান হাতে গুলি লোড করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়।
এই ফিরোজ মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকায় চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে নানান অপকর্মে নেতৃত্ব দিত। যদিও নিজেকে যুবলীগ নেতা হিসেবে পরিচয় দিলেও মুরাদপুর-বহদ্দারহাট এলাকায় ‘ডাকাত ফিরোজ’ নামেই বেশি পরিচিত। সবসময় যুবলীগের মিছিল-সমাবেশে দেখা যেত।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে ফেনী জেলার রামপুরা এলাকা থেকে অভিযান চালিয়ে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব-৭)। তাকে দোকান কর্মচারী মাহিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। তিনি চান্দগাঁও থানার মুরাদপুর এলাকার আব্দুল হামিদের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৮ জুলাই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ফিরোজসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা ছাত্রদের ওপর গুলিবর্ষণ ও লাঠিসোঁঠা নিয়ে হামলা করে। ওই দিন ১৬ বছর বয়সী দোকান কর্মচারী সায়মান প্রকাশ মাহিন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় তার বন্ধু মোহাম্মদ শরীফ বাদী হয়ে চান্দগাঁও থানায় ৪৪ জনকে আসামি করে একটি মামলা করে।

ফিরোজকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. শরীফ-উল-আলম। তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, নাশকতা, মাদক এবং ছিনতাইসহ নানান অপরাধে অন্তত ৫টি মামলা রয়ছ। তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চান্দগাঁও থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সন্ত্রাসী ফিরোজ এর আগে অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ বেশ কয়েকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। ২০১১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রবর্তক মোড়ে একটি রোগ নির্ণয়কেন্দ্র থেকে ১১ লাখ টাকা লুট করে নেয় এবং মারধর করা হয় চিকিৎসককে। ডাকাতি ঘটনার পরদিন নগরের বায়েজিদ থানার কয়লাঘর এলাকা থেকে সন্ত্রাসী ফিরোজ ও মনিরুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ফিরোজের পাঁচলাইশের আস্তানা থেকে ১২ রাউন্ড গুলিভর্তি দুটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলিসহ একটি ম্যাগাজিন, একটি একনলা বন্দুক, একটি বন্দুকের ব্যারেল, তিনটি কার্তুজ, দুটি চাপাতি জব্দ করা হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকাকালেই তখন ফিরোজ দাবি করেছিলেন, অস্ত্রগুলো দুর্ধুর্ষ ‘শিবিরি ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত ম্যাক্সন ও সরওয়ারের। এর মধ্যে ম্যাক্সন ভারতে মারা গেছেন বলে চাউর রয়েছে। এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ জুলাই রাতে তিন রাউন্ড গুলিভর্তি নাইনএমএম পিস্তলসহ আবারও ফিরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এছাড়া, চট্টগ্রামের আলোচিত স্কুলছাত্রী তাসফিয়া আমিন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিও তিনি।