মানুষের জীবনে কয়টি বাড়ির প্রয়োজন হয়- একটি, দুইটি, তিনটি? কিন্তু যার শত শত বাড়িতেও তৃপ্তি মেটে না তিনি হচ্ছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। এখন পর্যন্ত পৃথিবীজুড়ে তাঁর ৯০০টির বেশি বাড়ির খোঁজ পাওয়া গেছে। নিজে থাকেন লন্ডনের ১৪ মিলিয়ন ডলার মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়িতে। শুধুমাত্র দুবাই এবং যুক্তরাজ্যে রয়েছে অন্তত ৫০০টি বাড়ি। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সেই বাড়িতেই অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
গতকাল সোমবার কাতার-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার অনুসন্ধানে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। আল-জাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান ও উল থর্নের করা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, নতুন করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আরও ৩০০টি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে।
আল জাজিরার আই-ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরীকে লন্ডনের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেছে আল-জাজিজার অনুসন্ধানী টিম। ওই এলাকায় তার ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ছয়টি সম্পত্তি রয়েছে; যা তার যুক্তরাজ্যে গড়ে তোলা সম্পদের সাম্রাজ্যের ছোট একটি অংশ। যদিও তিনি ব্রিটেন ছাড়াও নিজের রিয়েল স্টেট ব্যবসার সম্প্রসারণ করেছেন দুবাই, নিউইয়র্ক, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়া পর্যন্ত। চৌধুরী ও তার স্ত্রীর এসব সম্পদ জব্দ করার জন্য বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

দুবাইয়ে জাবেদের সম্পত্তির সংখ্যা প্রাথমিকভাবে যা ধারণা করা হয়েছিল, তারচেয়েও বেশি বলে আল জাজিরার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। নতুন করে ফাঁস হওয়া ২০২৩ সালের সম্পত্তির তথ্যে দেখা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৫০টিরও বেশি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক সাইফুজ্জামান চৌধুরী; যার মূল্য ১৪০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। জাবেদের স্ত্রী রুখমিলা জামান দুবাইয়ে ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের আরও ৫০টি বাড়ির তালিকাভুক্ত মালিক। অর্থপাচারের অভিযোগে রুখমিলা জামানের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে তদন্ত চলছে। ২০২০ ও ২০২২ সালের দুবাইয়ে থাকা সম্পত্তির ফাঁস হওয়া ডাটায় এই দম্পতির তালিকাভুক্ত অন্য ৫৪টি সম্পত্তির খোঁজ পাওয়া যায়।
গত সেপ্টেম্বরে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদকে নিয়ে আল-জাজিরার প্রথম প্রতিবেদনে প্রচারিত একটি ভিডিওতে মর্যাদাপূর্ণ অপেরা জেলায় একটি পেন্টহাউসের মালিক হওয়ার বিষয়ে গর্ব করতে দেখা যায়। জমির রেকর্ডেও নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, সেখানে একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের তালিকাভুক্ত মালিক তিনি; যার মূল্য ৫০ লাখ ডলারের বেশি।
ফাঁস হওয়া নতুন তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এই মন্ত্রী ও তার স্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৩০০টিরও বেশি অ্যাপার্টমেন্ট কিনতে প্রায় ১৭০ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন বলে ধারণা করা হয়। সামগ্রিকভাবে এই দম্পতি বিশ্বজুড়ে ৮০০টিরও বেশি সম্পত্তির তালিকাভুক্ত মালিক।

সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অন্তত ৮০টির মতো বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য ৩০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম শহরেই আছে অর্ধশতাধিক। এছাড়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আমেরিকা মিলে রয়েছে ২২৫টি।
বাংলাদেশের মুদ্রা আইনে কোনো নাগরিককে বছরে ১২ হাজার ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আল জাজিরার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তার অফশোর সম্পদের ঘোষণা দিতে ব্যর্থ হয়ে বাংলাদেশের কর আইন লঙ্ঘন করেছেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার সাবেক মন্ত্রীদের ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। দেশের কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে চৌধুরী ও তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। ব্রিটেনে কয়েক মিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলাকালীন এই দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন আদালত।
মহানগর/এআই