চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় সন্ধ্যার পর সড়কবাড়ি বন্ধ করে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি ও হামলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের সরাসরি জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি! তবে কমিটি নিশ্চিত হয়েছে, বিদ্যুৎ থাকার পরও ‘অদৃশ্য’ কারণে সড়কবাতি বন্ধ ছিল। আর এ ঘটনায় পুরোপুরি ‘দায়ভার’ ঝুলনেরই!
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমীর নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে সড়কবাতিকাণ্ডে ঝুলন দাশেরই দায়ভার আছে উল্লেখ করে তিনটি সুপারিশ করা হয়েছে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, বাতি নেভানোর নির্দেশ দেওয়ার প্রমাণ না পেলেও সড়কবাতি বন্ধের সময়ে বিদ্যুৎ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে পিডিবি। যেহেতু বিদ্যুৎ থাকার পরও সড়কবাতি বন্ধ ছিল, সেহেতু এটি ‘গাফিলতি’। এছাড়া আরও একটি প্রকল্পের সড়কবাতিও বন্ধ ছিল। যেগুলো ঠিকাদারদের চসিককে হস্তান্তর করার কথা ছিল। তাও ঝুলন দাশ বুঝে নেননি। এসব দিক আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি মনে করছে পুরো ঘটনায় প্রকৌশলী ঝুলন দাশের দায়ভার রয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী। তবে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বাতি নেভানোর ঘটনায় সরাসরি কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি ঝুলন দাশের বিরুদ্ধে। তবে বিদ্যুৎ থাকার পরও সড়কবাতি বন্ধে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর দায়ভার রয়েছে বলে মনে করছে তদন্ত কমিটি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযুক্ত প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশ বর্তমানে চসিকে কর্মরত নেই। তাই আমরা সরাসরি তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। তবে প্রশাসক মহোদয়ের অনুমতি নিয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে আমরা অনুরোধ জানাবো তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
এর আগে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সড়কবাতি বন্ধের অভিযোগ তুলে প্রকৌশলী ঝুলন কুমার দাশের পদত্যাগ দাবিতে ১৩ আগস্ট চসিক কার্যালয় ঘেরাও করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে পরদিন ১৪ আগস্ট ঝুলন কুমার দাশকে সাময়িক বরখাস্ত করে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করে চসিক। পরে ২৬ সেপ্টেম্বর বদলি হন রংপুর সিটি কর্পোরেশনে।
যদিও অভিযোগ রয়েছে, যে অপরাধের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন, তদন্তের পর নিশ্চিত শাস্তি হতে পারে এমনটা অনুমান করতে পেরেছিলেন ঝুলন। তাই শাস্তির ‘খড়গ’ থেকে বাঁচতে তদবির করে দ্রুত চট্টগ্রাম ছাড়েন ঝুলন দাশ। ‘তড়িঘড়ির’ বদলি আদেশ আর অবমুক্তির আদেশে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি ছিল লুকোনো।
