চট্টগ্রাম নগরীর চেরাগী পাহাড় এলাকা যেন রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল গভীর রাতে। মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। সেই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নগরজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষে জড়িয়ে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে বলেও জানা গেছে। আজ বিকেল তিনটায় চেরাগী পাহাড় মোড়ে প্রতিবাদী সভাবেশ করে সনাতনী ছাত্র সমাজ। এদিকে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করলে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মোহাম্মদ রাফি।
ঘটনার সূত্রপাত গতকাল শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার সময় নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকার মোমিন রোডস্থ কদম মোবারক এতিমখানার সামনে। এতিমখানার ছাত্ররা উপর থেকে গরম পানি মারার অভিযোগের পর এ ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে ঘটনাটির খবর চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ফেসবুকে উভয় পক্ষের মানুষকে নিজেদের মতো করে ক্যাপশন যুক্ত করে লাইভ করতে দেখা গেছে। ফলে খবরটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে উভয় সম্প্রদায়ের কয়েকশ মানুষ এসে ঘটান্থলে উপস্থিত হন।
মহানগর নিউজের হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এ ঘটনায় মধ্যরাতে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন।

জানতে চাইলে বিক্ষোভকারী ব্যাটারিগলি ধোপাপাড়া সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের একজন কর্মকর্তা বলেন, হাজারী লেন থেকে আমরা প্রতিমা নিয়ে ওই গাড়িতে করে ব্যাটারিগলি যাচ্ছিলাম। আমরা সুশৃঙ্খলভাবেই যাচ্ছিলাম। কদম মোবারক এলাকায় আমাদের ভ্যানগাড়ি দাঁড়ালে হঠাৎ পাশের বিল্ডিংয়ের উপর থেকে কিছু দুর্বৃত্ত গরম পানি নিক্ষেপ করে। এরপর কারণ জানতে বিল্ডিংয়ের উপরে উঠলে আমিসহ তিনজনকে আটকে রাখা হয়। আমি চলে আসতে সক্ষম হলেও অন্য দুজনকে বেধড়ক পিটুনি দেয়া হয়। এতে তারা মারাত্মক আহন হন এবং চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়।
অন্যদিকে, কদম মোবারক এতিমখানার একজন পরিচালক গাজী ইসলামাবাদী বলেন, আমাদের ছাত্ররা গরম পানি মারার প্রশ্নই ওঠে না। যেখান থেকে পানি মারার দাবি করা হয়েছে, ওই দিকে আমাদের কোনো আবাসিক ভবন নেই। গরম পানি মারবে কেন?
তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের এতিমখানা নিয়ে বড় ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে।
ফেসবুকে প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে জসিম উদ্দিন নামের একজন লেখেন, গতকাল রাত আনুমানিক ৯টার ঘটনাটা আমার স্ব-চোখে দেখা। এতিমখানার তিনতলা থেকে ৯/১০ বছরের এক ছাত্র কুলির পানি ফেলে রাস্তায়। পানির ছিটা আমার গায়েও পড়েছে, প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দু ছেলেদের গায়েও কিছুটা পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনাকে কে কেন্দ্র করে সনাতনীরা জড়ো হয়ে মাদ্রাসা ও মসজিদে ইটপাটকেল ছুঁড়ে ‘জয়শ্রীরাম’ স্লোগানে স্লোগানে।
মহুয়া ভট্টাচার্য নামের আরেকজন লেখেন, এতিমখানায় কেউ আক্রমণ করেনি, এতিমখানা থেকে আক্রমণ করা হয়েছে। কয়েকটি হিন্দু ছেলে ঢুকে অভিযোগ জানানোতে ওদেরকে বেধড়ক পিটিয়ে একজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

কোতোয়ালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নওশের কোরেশী জানান, বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছুটে যান। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন। আজ সনাতন ছাত্র সমাজ একটি প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ঘটনা ছড়িয়ে পড়ায় পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক বাকযুদ্ধ চলছে। কেউ কেউ আবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোরও চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন ছাত্র সমন্বয়ক খান তালাত রাফি। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ধর্ম আমাদের আবেগের জায়গা এবং এটাইকেই ব্যবহার করে কুচক্রিমল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে। ধর্মপ্রাণ সকলকেই সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। যারা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করবে তাদেরকে আমরা সবাই মিলে প্রতিহিত করব।