১৯শে জুন, ২০২৫

সিজেকেএস’র সাবেক সম্পাদক-কোষাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, ১৪ বিষয়ে ১০ দিনের মধ্যে তথ্য চায় দুদক

শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান এডহক কমিটির কাছে ১৪টি বিষয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

জানা গেছে, সংস্থাটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং সাবেক কোষাধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদকে এই অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মুসাব্বির আহমেদ ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা পরিদর্শন করেছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য চেয়েছেন। গত ১৫ মে তার স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সিজেকেএস সভাপতি ও জেলা প্রশাসক এবং সংস্থার বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা ক্রীড়া অফিসারের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে ১৪টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তথ্যাদি চাওয়া হয়েছে এবং চিঠি প্রাপ্তির ১০ কার্যদিবসের মধ্যে এসব তথ্য দুদকে জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

যেসব বিষয়ে তথ্য চেয়েছে দুদক

  • দুদকের চিঠিতে সিজেকেএস’র গঠনতন্ত্রের সত্যায়িত ফটোকপি, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সংস্থার নামে পরিচালিত সকল ব্যাংক হিসাবের তালিকা (হিসাব নম্বরসহ), বাজেট ও সম্পূরক বাজেট এবং আয়-ব্যয়ের বিস্তারিত বিবরণ চাওয়া হয়েছে।
  • এছাড়াও সিজেকেএস ভবনের বিভিন্ন তলায় সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ (যেমন: সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদক, কাউন্সিলরদের কক্ষ, খেলোয়াড়দের ড্রেসিং রুম ও টাইলস) এবং আউটার স্টেডিয়ামের মাটি ভরাট ও গ্রিল স্থাপন, টেনিস কোর্ট ও ডরমেটরি নির্মাণ কাজের বিস্তারিত ব্যয়, নির্বাহী কমিটির অনুমোদন এবং সংশ্লিষ্ট সকল টেন্ডার ডকুমেন্ট (বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্র, মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, ওয়ার্ক অর্ডার, চুক্তিপত্র ইত্যাদি) তলব করা হয়েছে।
  • সিজেকেএস জিমনেসিয়ামটি শৈবাল দাস সুমনের (পরিচালক, স্টিচ টোন অ্যাপারেলস লিমিটেড) কাছে ভাড়া দেওয়া সংক্রান্ত চুক্তিপত্র, তার কোনো বকেয়া আছে কিনা এবং চুক্তির মেয়াদ শেষে নবায়ন করা হয়েছিল কিনা সে সম্পর্কিত নথিও চাওয়া হয়েছে। জিমনেসিয়াম সংলগ্ন লিটল লবস্টার রেস্টুরেন্টের সঙ্গে সিজেকেএস’র কোনো চুক্তি থাকলে তার কপিও দিতে বলা হয়েছে।
  • তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রাম আগমন উপলক্ষে ২০২২-২৩ সালে সিজেকেএস’র মোট ব্যয়, নির্বাহী কমিটির অনুমোদন এবং গত দুবার অনুষ্ঠিত শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজনে মোট ব্যয় ও অনুমোদনের রেকর্ডপত্রও দুদক চেয়েছে।
  • স্টেডিয়াম শপিং কমপ্লেক্সের ৪র্থ ও ৫ম তলার ২০৬টি দোকান হুমায়ুন কবির মানিক গংদের বরাদ্দ দেওয়ার চুক্তিপত্র এবং ২১ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত তাদের পরিশোধিত ও বকেয়া টাকার পরিমাণ জানতে চাওয়া হয়েছে। সিজেকেএস’র নির্বাহী সদস্য দিদারুল আলমের নামে নীচতলায় ৩টি দোকান বরাদ্দের চুক্তিপত্র এবং তার পরিশোধিত ও বকেয়া সংক্রান্ত সকল রেকর্ডপত্রও তলব করা হয়েছে।
  • পাশাপাশি, গত ৫ বছরে সিজেকেএস’র প্রশিক্ষণ মাঠ কাদের ভাড়া দেওয়া হয়েছে, এতে কমিটির অনুমোদন ছিল কিনা এবং ভাড়া বাবদ মোট কত টাকা আয় হয়েছে তার হিসাবও জমা দিতে বলা হয়েছে।

দুদকের চিঠি পাওয়ার বিষয়ে সিজেকেএস অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা ক্রীড়া অফিসার আবদুল বারী জানান, “চিঠিতে আমাকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। আমি চিঠিটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের (সভাপতি ও জেলা প্রশাসক) কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তিনি যেভাবে নির্দেশনা দেবেন, সেভাবে কাজ হবে।”

দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মুসাব্বির আহমেদ বলেন, “অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থায় গিয়েছিলাম এবং কিছু তথ্য চেয়েছি। বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন, তাই বিস্তারিত বলা সমীচীন হবে না।” তবে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই কর্মকর্তা স্টেডিয়াম শপিং কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেছেন।

এই তদন্ত চট্টগ্রাম ক্রীড়া অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন