চট্টগ্রাম আদালতে জামায়াত-বিএনপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোল, এজলাস ছেড়ে চলে যান বিচারক

শেয়ার করুন

শ্রমিক ইউনিয়নের ৬ নেতার জামিন নামঞ্জুরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম আদালতে জামায়াত-বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। দুই গ্রুপকে থামাতে না পেরে একপর্যায়ে এজলাস ছেড়ে চলে যান বিচারক। এ সময় বিচারকের দিকে ফাইল ছুঁড়ে মেরে ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেন একটি পক্ষ।

পরবর্তীতে আরেক আইনজীবীর মাধ্যমে আগামী সোমবার শুনানির আবেদন করা হলে আদালত তাও নামঞ্জুর করেন এবং আসামিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ হাসানুল ইসলামের আদালতে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সিটি কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলার অভিযোগে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ভুক্তভোগী মাশফিকুর রহমান শান্ত নামের এক শিক্ষার্থী সদরঘাট থানায় বিস্ফোরক এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনের ধারায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের (সিবিএ) সিবিএর ছয় নেতাসহ ১১৩ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়।

মামলার আসামি হওয়া ওই ৬ জন হলেন— শ্রমিক লীগ নেতা ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আইয়ুব, সাধারণ সম্পাদক হামিদুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ওরফে আকবর, অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আলী ও দপ্তর সম্পাদক বাবু রনি কর ও সদস্য রাজীব ধর।

আদালত সূত্র জানায়, আসামিরা গত ১৬ ফেব্রুয়ারি উচ্চ আদালতে আগাম জামিন আবেদন করলে আদালত ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন মঞ্জুর করেন। পরবর্তীতে জামিনের মেয়াদ শেষের আগেই গত ১০ এপ্রিল নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন আসামিরা। ওই জামিন আবেদনের ওকালতনামা দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন। আজ সেই জামিন আবেদনের শুনানির দিন ধার্য্য ছিল।

আদালত সূত্র জানিয়েছে, সকাল ১১টার দিকে এজলাস বসলে জামিন আবেদনের বিপক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন বাদীপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানির ১৫ মিনিট না যেতেই আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হট্টগোল করতে থাকেন। এরপর আদালত জামিন নামঞ্জুরের আদেশ দেন। আদালতের আদেশের পরপরই সাড়ে ১১টার দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান।

একপর্যায়ে বিচারককে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান এবং ‘জিয়ার সৈনিক, এক হও লড়াই করো’ স্লোগান দেওয়া হয়। বাদী-বিবাদী পক্ষের আইনজীবীদের বাগবিতণ্ডার মধ্যেই বিচারকের দিকে ফাইল ছুঁড়ে মারেন আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী। এরপরই বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ভিন্ন আইনজীবীর ওকালতনামার মাধ্যমে ওই ৬ আসামির জামিন শুনানির দিন আগামী সোমবার ধার্য্যের আবেদন করা হয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিচারক ফের এজলাসে আসেন। শেষমেষ ওই আবেদনটিও আদালত নামঞ্জুর করেন।

জানা গেছে, শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। কিন্তু তার পক্ষে শুনানি করেন জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ ইয়ার্স কাউন্সিলের নেতা অ্যাডভোকেট শামসুল আলম। এছাড়া বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের একাংশও বাদীপক্ষের হয়ে শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।

অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন পিপি এস উ নুরুল ইসলাম, পিপি কামরুল হাসান সাজ্জাদ, পিপি শফিউল মোর্শেদ, পিপি আবুল কালাম আজাদ, পিপি রফিক আহমেদ, পিপি সেলিম উদ্দিন শাহীন, পিপি ফয়জুল আমিন, এপিপি দেলোয়ার হোসেন, এপিপি নেজাম উদ্দিন, এপিপি ইকবাল হোসেন এপিপি রশিদ বিন জাহেদ, এপিপি বেলাল হোসেন প্রমুখ। যারা সবাই বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত।

আসামিদের পক্ষে জামিন আবেদনে ওকালতনামা দিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি নেজাম উদ্দিন। জামিন আবেদনে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করেন তিনি। এছাড়া আসামিরা আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে নয় বরং বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলেও দাবি তার।

এর আগেও গত বছরের ২ ডিসেম্বর আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলার আসামি মো. নুরু এবং মো. দেলোয়ার হোসেনের পক্ষে জামিন আবেদনে ওকালতনামা দিয়েছেন নেজাম উদ্দিন। সেই ঘটনায় সাধারণ আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েছিলেন তিনি। তখন তাকে মহানগর পিপি কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে সাদা কাগজে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। যদিও সেই পদত্যাগ পরবর্তীতে কার্যকর হয়নি।

সূত্র : সিভয়েস২৪

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন