ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) গাজার একটি অংশ দখলের ঘোষণা দেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় গাজা উপত্যকার ওই অংশকে তিনি মোরাগ অ্যাক্সিস বলে অভিহিত করেন। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই এ খবর জানিয়েছে।
গাজা উপত্যকায় পূর্ব থেকে পশ্চিম দিক বিস্তৃত ভূখণ্ডটি খান ইউনিস এবং রাফাহর মধ্যে অবস্থিত। কথিত এই মোরাগ অ্যাক্সিস মূলত কৃষিজমির সমন্বয়ে গঠিত।
এই ভূখণ্ডের কিছু অংশ আবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মানবিক অঞ্চল বলে ঘোষণা করেছিল। তখন এক ঘোষণায়, অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের এই অংশে আশ্রয় নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল তারা।

অবশ্য নেতানিয়াহুর সাম্প্রতিক ঘোষণার আগে এই অংশকে অ্যাক্সিস বা করিডর হিসেবে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়নি।
মোরাগ নামটির প্রেক্ষাপটও এই বেলা একটি জানিয়ে রাখা ভালো। ১৯৭২ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওই অঞ্চলে একটি ইসরায়েলি বসতি অবৈধভাবে গড়ে উঠেছিল। সেই বসতির নাম ছিল মোরাগ।
মাস দুই স্থিতিশীলতার পর গত ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইসরায়েলি স্থল ও বিমান বাহিনী। গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে রাফা শহরে বিগত কয়েকদিনের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর হতে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে।
ইসরায়েলি সেনারা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে। এমনকি চিকিৎসাকর্মীদেরও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটে পালিয়ে গেছেন। সেনাবাহিনীর দাবি, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রাফাহ শহরকে ঘিরে ফেলা।
ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল ১২ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তার অংশ হিসেবেই খান ইউনিস ও রাফাহকে বিচ্ছিন্ন করতে চাচ্ছে সেনাবাহিনী।

এদিকে, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম হারেতজকে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, মোরাগ অ্যাক্সিস দখলের ঘোষণায় তারা অবাক হয়েছিলেন। কারণ রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়নি। ফলে এমন ঘোষণা বরং তাদের সেনাদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
মোরাগ অ্যাক্সিসের দখল নেওয়ার বিষয়ে নেতানিয়াহু বলছেন, তাদের উদ্দেশ হলো রাফা ও খান ইউনিসকে বিচ্ছিন্ন করে গাজার ওপর চাপ সৃষ্টি করা। ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই চাপের মাত্রা বৃদ্ধি অব্যাহত রাখা হবে।
এর আগে, গাজার উত্তরাঞ্চলের ওপর চাপ বৃদ্ধি করে সেখানে আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রায় একই প্রচেষ্টা নিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। সেখানেও পূর্ব-পশ্চিমে বিস্তৃত করিডরের দখল নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
যুদ্ধের শুরুতেই বহুল আলোচিত নেতজারিম করিডরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা সিটি ও কেন্দ্রীয় গাজার মধ্যে এই করিডরের অবস্থান। উদ্দেশ্য ছিল, উপত্যকার উত্তর ও দক্ষিণে মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা।