এখন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় তেল যেত নদী ও সড়ক পথে। এতে সময় যেমন বেশি লাগত, ঠিক একইভাবে চুরি হতো তেল। এর বাইরে নানন সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও তেল পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া, শুঙ্ক মৌসুমে নৌপথে নাব্যতা কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন করাও কঠিন হয়ে পড়ে। এতে বছরে শত শত কোটি টাকা লোকসান দেয় সরকার।
তবে আশার কথা হচ্ছে, অচিরেই এসব সংকট নিরসন হচ্ছে। আগামী জানুয়ারি থেকেই ২৫০ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাবে তেল। এতে সময় যেমন কমবে, তেমনি চুরিও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। উল্টো বছরে ২৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
বিপিসি জানিয়েছে, পাইপলাইন স্থাপনের কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা বাকি। এই পাইপলাইন দিয়ে ৩০ লাখ টন তেল যাবে নারায়নগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ নামের প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। বিপিসির পদ্মা অয়েল কম্পানির তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন হয়। শুরুতে পাইপলাইন প্রকল্পটির ব্যয় দুই হাজার ৮৬১ কোটি ৩১ লাখ টাকা ধরা হয়। পরে সংশোধিত ব্যয় দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। তবে প্রকল্পটির কাজ আরো দুই বছর আগে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নানা জটিলতায় দেরি হয়েছে।
বিপিসির চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আমিন উল আহসান গণমাধ্যমকে বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পটি আগামী জানুয়ারিতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এটির মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহ শুরু হলে পরিবহন খরচ ও অপচয় অকেটাই রোধ করা সম্ভব হবে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম পাইপলাইন প্রকল্পের পরিচালক আমিনুল হক বলেন, এরই মধ্যে পাইপলাইন স্থাপনের কার্যক্রম শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পুরোপুরিভাবে তেল সরবরাহ শুরু হলে যে পরিমাণ পরিবহন ব্যয় ও অপচয় রোধ হবে, তার মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যেই প্রকল্পের ব্যয় উঠে আসবে।
জানা গেছে, দেশের জ্বালানি তেলের ৯০ শতাংশ পরিবাহিত হয় নৌপথে। তেল বিপণন কম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় ২০০টি অয়েল ট্যাংকার এসব জ্বালানি তেল পরিবহন করে। নৌপথে জ্বালানি তেল পরিবহনে সিস্টেম লসের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটে।
পদ্মা অয়েল কম্পানি লিমিটেডের উপমহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) আসিফ মালিক বলেন, চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে ঢাকায় তেল যেতে অনেক সময় দুই দিন লেগে যেত। বিভিন্ন সময় ট্যাংকারে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা ঘটে। পাইপলাইনের মাধ্যমে পরিবহন ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি অনেকটাই ঝুঁকিমুক্তভাবে তেল সরবরাহ করা যাবে।
