মিরসরাই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কর্মী সমাবেশ চলছি। এ সময় স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহ আলম সমাবেশস্থলে এসে মাইক কেড়ে নেন। এলাকায় কর্মী সমাবেশ করার আগে বিএনপির কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি কেন জানতে চেয়ে উত্তপ্তবাক্যে চিৎকার করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর যুবদল নেতা কামরুল হাসার নেত্বতে প্রায় অর্ধশতাধিক একটি গ্রুপ এসে জামায়াতের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলার খবরটি শুনে দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান স্থানীয় সাংবাদিক আশরাফ উদ্দিন। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও ছবি তোলার সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় সাংবাদিক আশরাফসহ জামায়াতের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হন।
গতকাল শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মিরসরাই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এস রহমান স্কুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহতরা হলেন- সাংবাদিক আশরাফ উদ্দিন (৩৯), নুরুল আলম (৪০), শহিদুল ইসলাম (৩০), সাইফুল ইসলাম (৩৫), কফিল উদ্দিন (২০), নুরু উদ্দিন (৩৩), কাজী সামির (২০), তানজিম (১৮), সাব্বির শাহাদাৎ (২০) ও রাহাত হাসান হাসিব (১৮)।

আহত জামায়াতের নেতাকর্মীরা স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও মস্তাননগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নুরুল আলমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা জামায়াতের অফিস সেক্রেটারি শফিকুল আলম শিকদার দাবি করেন, শুক্রবার বিকালে সাংগঠনিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিরসরাই পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় একটি স্কুল মাঠে কর্মী সমাবেশ চলছিল। এ সময় এলাকার স্থানীয় বিএনপি নেতা শাহ আলম অনুষ্ঠান স্থলে এসে জামায়াত নেতাদের হাত থেকে মাইক কেড়ে নিয়ে বলেন, আমাদের না জানিয়ে অনুষ্ঠান করা যাবে না। তখন আমাদের সংগঠনের নেতাকর্মীরা বুঝিয়ে তাকে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের করে দেন। এর কিছুক্ষণ পর মিরসরাই পৌরসভা যুবদলের আহ্বায়ক কামরুল হাসানের নেতৃত্বে ৪০/৫০ জনের একটি দল লাঠিসোঁটা ও হকিস্টিক নিয়ে এসে মাইক কেড়ে নিয়ে বলেন, আপনারা যে দলের হোন না কেন এখানে অনুষ্ঠান করতে হলে আমাদের থেকে অনুমতি নিতে হবে- এ বলে এলোপাতাড়ি হামলা করেন। হামলায় সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সাংবাদিক আশরাফ ও আমাদের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী নিজাম উদ্দিন বলেন, মিরসরাই পৌরসভা এলাকায় জামায়াতের সমাবেশে হামলার ঘটনাটি একেবারেই অনাকাক্সিক্ষত। সংগঠন এই হামলার দায় নেবে না। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এই হামলা ঘটিয়েছে।
এদিকে, কর্মী সমাবেশে যুবদল নেতার হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে আজ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে জামায়াত। বিকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পৌরসভা এলাকার থানা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ প্রাঙ্গণ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি বের হয়। উপজেলা জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কয়েক শত নেতাকর্মীর অংশগ্রহণে বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বনফুল সুইটসের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে। এ সময় জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে স্লোগান দেন নেতা-কর্মীরা।
মিরসরাই থানা জামায়াতের আমির নুরুল কবির বলেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটায় তারা আমাদের কর্মী সমাবেশে এমন ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

মিরসরাই থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দীপ্তেশ রায় বলেন, জামায়াতের কর্মী সমাবেশে মারামারির ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই ঘটনায় থানায় এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।