১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আ.লীগ কর্মীদের গণধোলাই দিয়ে নিয়ে আসবেন, মামলা এস্টাব্লিশড করার চেষ্টা করব : রাঙ্গুনিয়ার ওসি

শেয়ার করুন

‘ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগকর্মীদের গণধোলাই দিয়ে নিয়ে আসবেন, থানায় কিংবা আদালতে মামলা এস্টাব্লিশড করার চেষ্টা করব।’ মন্তব্যটি রাঙ্গুনিয়া দক্ষিণ থানায় সদ্য নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান হাবিবের। উপজেলার সফরভাটা ইউনিয়ন বিএনিপ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা চলাকালে দিকনির্দেশনা দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন।

গণমাধ্যমের হাতে আসা ৬ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে ওসিকে বলতে শোনা যায়, ‘ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দেখলে গণধোলাই দিয়ে থানায় নিয়ে আসবেন। থানায় না হলে আদালতে হলেও মামলা এস্টাব্লিশড করে দেওয়ার চেষ্টা করব। আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই।’

ওসির এমন বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ার পর স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তিনি কি ওসি না রাজনৈতিক এজেন্ট?

বক্তব্যের শুরুতে তিনি বলেন, ‘বীর সন্তান শহীদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আমি আমার বক্তব্য শুরু করছি।’ এরপর তিনি যোগদান করার পর বিভিন্ন সন্ত্রাস ও মাদকবিরোধী কার্যক্রমের ফিরিস্তি তুলে ধরেন।

বক্তব্যের একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আমার কথা হলো, বিএনপি বৃহত্তর একটি দল। দল-মত-গ্রুপ থাকতেই পারে। দল যাকে নির্বাচনের জন্য প্রতীক বরাদ্দ দেবে তার সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আপনারা সবাই কাজ করবেন। আরেকটি কথা, বিএনপি ১৬ বছর সরকারের বাইরে ছিল। চুরি, ছিনতাই, ধর্ষণ এগুলো ছিল না।’

আওয়ামী লীগের আমলে ধর্ষণে বিশ্বে নজির তৈরি হয়েছে দাবি করে ওসি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সময়ে ধর্ষণ হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ হয়েছে। বিশ্বের নজির ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে হয়েছে। যারা সাধারণ মানুষকে ১৬ বছর ঘরছাড়া করেছিল, নির্যাতন করছিলো।’

বিএনপি নেতাকর্মীদের মামলা করতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়ে ওসি বলেন, ‘আমার এক ভাই বলেছে, মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। আমার সাথে যোগাযোগ করলে আমি একটা সঠিক পরামর্শ দিব। প্রয়োজনবোধে কোর্টে আলাপ করবো মামলাটি কিভাবে এস্টাবলিশড করা যায়। তার জন্য আমি চেষ্টা করবো।’

‘খাঁটি’ বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা চেয়ে ওসি আহসান হাবিব বলেন, ‘আমাদের কিছু বিএনপির লোক আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গেছে। অরজিনাল ওয়ার্ডভিত্তিক একটা লিস্ট আমি চাই। অপরাধ ঘটলে সবকিছু থানার ওসির পক্ষে সম্ভব না। কিছু দায়িত্ব আপনাদেরও নিতে হবে। যে লোকটা সৎ এবং যোগ্য তাকে দিলে সুনাম হবে, বিএনপির সুনাম হবে। সেটা করতে হবে। চাঁদাবাজি করা যাবে না।’
আওয়ামী নেতাকর্মীদের গণধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দের আহ্বান জানিয়ে ওসি বলেন, ‘বিশেষ করে একটি কথা বলতে চাই, যারা ৫ আগস্টের আগে বিভিন্ন মানুষের বাড়িঘর ভাঙচুর করেছে, মারপিট করছে তাদের দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ার মধ্যে গণধোলাই দিয়া থানায় নিয়া আসবেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ ঠাঁই পাবে না। আপনাদের এই পর্যায়ে যদি আওয়ামী লীগ থাকতো আপনাদের ঠ্যাং-ঠোং (হাত-পা) ল্যাংরা হয়ে যেতো।’

প্রকাশ্যে সরকারি পোশাক পরিহিত অবস্থায় ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্য প্রসঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি আহসান হাবিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এটাতো ভুলবশত হয়ে যেতে পারে। এটা আর ইয়ে করার দরকার নেই। আমার থানায় একসময় দাওয়াত রইলো। এটা অনিচ্ছাকৃত হয়ে গেছে। এটা আসলে একটু ইয়ে হয়ে গেছে আর কি। ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে একটু দেখবেন।’

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন