১৪ই মার্চ, ২০২৫

দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতিতে জর্জরিত ফজলুল্লাহ ১৬ বছর পর গদি হারাল, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার দাবি ক্যাবের

শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনের ১৬ বছর দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে জর্জরিত ছিল প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। সর্বশেষ গত দুই মাসে অন্তত চার আত্মীয়কে একক ক্ষমতাবলে পদোন্নতিসহ চুক্তভিত্তিক প্রকল্প শেষ হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পুনর্বহাল করার অভিযোগ উঠেছে। এর আগে নিজের মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে স্যুারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়েছিলেন। গত সেপ্টেম্বরে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনেও ফজলুল্লাহর অনিয়ম-দুর্নীতির তদন্ত করতে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে উড়ে এসেছিল স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালক মাহমুদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি টিম। সকালে বিশ্রাম শেষে তারা ওয়াসা কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এবং বিভিন্ন প্রকল্পের কাগজপত্র খতিয়ে দেখে সেদিন রাতে ঢাকায় ফিরে যায়।

অবশেষে গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ সচিব মো. আব্দুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এমডিকে অপসারণের বিষয়টি জানানো হয়।

এদিকে, আজ বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ’র দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি জানিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগ ও নগর কমিটির নেতারা।

এক বিবৃতিতে বলা হয়, চট্টগ্রাম ওয়াসায় টানা ১৬ বছর ধরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকার পরও লোভনীয় সেই এমডি পদ আঁকড়ে থাকার জন্য বিভিন্ন পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে তদবির ও অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন এ কে এম ফজলুল্লাহ।

অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম ওয়াসার বিতর্কিত প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ’র আমলে সংঘটিত সকল দুর্নীতি-অনিয়মের তদন্ত করে শাস্তির আওতায় আনা ও তার দেশত্যাগে দ্রুত নিষেধাজ্ঞা জারি করতে হবে। নিজের আত্মীয় স্বজনকে পদোন্নতি দেওয়া, নিজের মেয়ের প্রতিষ্ঠানকে সুয়্যারেজ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়াসহ হাজারো অনিয়মে জড়িত তিনি। ইতিমধ্যে তার আত্মীয় ও ওয়াসা কর্মকর্তারা দেশত্যাগ করেছেন। অপসারিত এমডি যে কোনও সময় দেশ ত্যাগ করতে পারেন।

এদিকে, চট্টগ্রাম ওয়াসার নিয়মিত কাজ পরিচালনার সুবিধার্থে স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালককে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে এমডির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪ এর ধারা ২৮ ক-এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ’র চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিলপূর্বক পদ থেকে অপসারণ করা হলো।

প্রসঙ্গত, এ কে এম ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেন ২০০০ সালে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জুলাই প্রথমবার চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে এক বছরের জন্য নিয়োগ পান। এরপর আরও এক বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১১ সালে ঢাকা ওয়াসার আদলে চট্টগ্রাম ওয়াসাতেও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ তৈরি করা হয়। ওয়াসা বোর্ডও পুনর্গঠন করা হয়। তখন এমডি পদে নিয়োগ পান তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম ফজলুল্লাহ। সেই থেকে এমডি পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ৩ বছরের জন্য এমডি পদে নিয়োগ পান। এমডি পদে থাকার সুবাদে প্রকল্পে অনিয়ম, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি সহ বিভিন্ন অপরাধে জড়ান তিনি।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন