১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত ৪৬ বছরে দেশ থেকে বিদেশে পাচার হয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধুমাত্র ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাচার হয়েছে ৭৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। যা একই অর্থ বছরের সৃষ্ট মোট কালো টাকার ৯ শতাংশের সমপরিমাণ।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ সমর্থনের কথা জানানো হয়।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি মনে করছে, দেশের অর্থনীতিতে ক্যানসার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়া কালো টাকা, অর্থপাচার ও দুর্নীতির মতো মৌলিক সমস্যা নির্মূলে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার সমর্থ হবে।

এদিকে, দেশ থেকে পাচার হওয়া এই অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্র্বতী সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। একইসঙ্গে অর্থ পাচারের উৎসগুলো বন্ধে অন্তর্র্বতী সরকারের প্রচেষ্টাকে সর্বোতভাবে সমর্থন জানিয়েছে।
অর্থনীতিতে পেশাদারদের সংগঠনটি মনে করছে, প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অন্তত ৩ শতাংশের সমপরিমাণ মতো অর্থ পাচার হয়ে যাচ্ছে, যা দেশে বহুমাত্রিক বৈষম্য ও দারিদ্র্যের বিস্তার ঘটাচ্ছে এবং সর্বগ্রাসী দুর্নীতিকে উৎসাহিত করছে।
অর্থনীতি সমিতির হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে অর্থ পাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭৫ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা, যা একই অর্থবছরের সৃষ্ট মোট কালো টাকার (৮ লাখ ৪১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকা) ৯ শতাংশের সমপরিমাণ এবং একই অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১৬.৩ শতাংশের সমপরিমাণ। এ হিসাবে ৪৬ বছরে (১৯৭২-৭৩ থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে) দেশের মোট অর্থ পাচারের পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। যেখানে প্রতিবছর বাজেট সংকুলানের জন্য সরকারকে দেশি-বিদেশি বিপুল ঋণ নিতে হচ্ছে, সেখানে মোট বাজেটের প্রায় এক-পঞ্চমাংশের সমপরিমাণ অর্থ পাচার হয়ে যাওয়া জাতি হিসেবে অত্যন্ত উদ্বেগের।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে অন্তর্র্বতী সরকারের টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়। তবে মনে করে, যেহেতু দুর্নীতি-কালো টাকা-অর্থ পাচার বাংলাদেশের অর্থনীতিকে টেকসই ও উন্নত করার পথে অন্যতম প্রতিবন্ধকে পরিণত হয়েছে, সেহেতু ‘দুর্নীতি, কালো টাকা ও অর্থ পাচার কমিশন’ শীর্ষক একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন।