প্রতিটি ফানুসে ছিল শিল্পের ছোঁয়া। শিল্পীর রংতুলির আঁচড়ে ফানুসগুলো হয়ে ওঠে একেকটি শিল্প কর্ম, যা উৎসবে বৈচিত্র্য এনেছে, বাড়িয়েছে ভাবগাম্ভীর্য। মিটি মিটি আলো ছড়ালো আকাশজুড়ে। ফানুস যখন উড়তে উড়তে দূর নীলিমায় চলে যায়, তখন কোনটি তারা কোনটি ফানুস বোঝাই মুশকিল! ফলে রঙবেরঙের ফানুসের আলোয় চট্টগ্রামের আকাশ ঝলমল করছিল।
আজ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমা। এ উপলক্ষে সকাল থেকেই চট্টগ্রামের বিহারগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতির পর সন্ধ্যায় শতশত ফানুস ওড়ানোর মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করেছেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা। চট্টগ্রামে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম মন্দির নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দিরের চার পাশে লোকেলোকারণ্য।
আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকাল থেকেই পূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল, ভিক্ষুসংঘের পিণ্ডদানসহ নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুখর ছিল চট্টগ্রামের বৌদ্ধ বিহারগুলো। কোথাও কোথাও প্রবারণা পূর্ণিমা ঘিরে মন্দিরের চারপাশে বসেছে বিভিন্ন সামগ্রীর মেলা।

এদিন নগরের নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির, কাতালগঞ্জ নবপতি বিহার, আগ্রাবাদ শাক্যমুনি বৌদ্ধ বিহার, দেবপাহাড় পূর্ণাচার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার, মোমিন রোডে সর্বজনীন বৌদ্ধ বিহারসহ বিভিন্ন মন্দিরে ধর্মীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, চট্টগ্রামের চেরাগী মোড় থেকে শুরু হয়ে পুলিশ প্লাজার আগ পর্যন্ত এবং লাভলেইন মোড় পর্যন্ত মানুষ আর মানুষ। নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে ফানুস উড়িয়ে প্রবারণা পূর্ণিমা উৎসব পালন করছেন হাজার হাজার মানুষ।
এদিকে, প্রবারণা পূর্ণিমাকে ঘিরে চট্টগ্রামের বৌদ্ধ মন্দিরের চারপাশে নিরাপত্তায় বিপুল সংখ্যক সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্য মোতায়েন আছে।
বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মতে, আকাশে ফানুস ওড়ানো কেবল বৌদ্ধদের উৎসব নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে এর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। তাই ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে সূত্র পাঠের মাধ্যমে ওড়ানো হয় ফানুস।

উল্লেখ্য, মহামতি গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভের পর আষাঢ়ি পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত তিন মাস বর্ষাবাস শেষে প্রবারণা পালন করেন। সেই থেকে বৌদ্ধধর্মীয় গুরুরা বর্ষাবাস শেষে দিনটি পালন করে আসছেন। তাদের বিশ্বাস, এরমাধ্যমে ভিক্ষু ও গৃহীদের পাপ মোচন হয়।