দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট থেকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে চলে যায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। এতে হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ সব ধরনের চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু জরুরি বিভাগে রোগীদের হাউমাউ কান্না এবং চিকিৎসা সেবা পেতে মেঝেতে শুয়ে পড়ার মতো অসহায়ত্ব দেখে পৌণে এক ঘণ্টা পর বিকেল ৪টা থেকে ফের চিকিৎসা সেবা শুরু করেন দায়িত্বরত চিকিৎসকরা।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার আশ্বাসে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আগামীকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) রাত ৮টা পর্যন্ত স্থগিত করেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এ আশ্বাস দেন।

এর আগে দুপুর পৌনে একটার সময় ঢামেকের প্রশাসনিক গেটে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আবদুল আহাদ কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষণার পর থেকে ঢামেকের জরুরিবিভাগসহ সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেওয়ায় বিপাকে পড়েন শত শত রোগী। অনেকেই কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করে ফিরে গেছেন। রোগীদের কেউ কেউ জরুরি বিভাগের সামনে শুয়ে পড়তে দেখা যায়। চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অনেকেই যন্ত্রণায় সহ্য করতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অ্যাম্বুলেন্সে করে জরুরি চিকিৎসার জন্য আনা রোগীদের নিয়ে কী করবেন- বুঝতে পারেননি কেউ। রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনদের আহাজারির দৃশ্য দেখা গেছে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. মোমিন উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, আমাদের জরুরি বিভাগের চিকিৎসাসেবা প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার মতো বন্ধ ছিল। পরে রোগীদের অসহায়ত্ব দেখে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে আবারও সেবা দেওয়া শুরু করে দেই।
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল তসলিম উদ্দীন খান বলেন, দুপুরে ঢামেক থেকে সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করলে চট্টগ্রামেও অল্প সময়ের জন্য কর্মসূচি পালন করেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তবে ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা রোগীদের সেবা দিয়েছিলেন। তাছাড়া আমাদের জরুরি বিভাগের সেবাও বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে। বিকেল ৪টা থেকে জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
দুপুরে শাটডাউন ঘোষণার সময় চার দফা দাবি জানিয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, দাবি আদায় ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে সবধরনের চিকিৎসাসেবা খাতে কমপ্লিট শাটডাউন চলবে।
চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো-

১. হাসপাতালের মতো একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যে সকল ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সাথে জড়িত তাদের সকলকে চিহ্নিত করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
২. নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে অবিলম্বে দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৩. নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের লক্ষ্যে হাসপাতালে রোগীর ভিজিটর (ভিজিটর কার্ডধারী) ব্যতীত বহিরাগত ব্যক্তি বা মহল কোনোভাবেই হাসপাতালে ভেতর প্রবেশ করতে পারবে না, যা স্বাস্থ্য পুলিশের (আর্মড ফোর্স) মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. হাসপাতালে রোগীর সেবাপ্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অসংগতি/অবহেলা পরিলক্ষিত হলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা যেতে পারে। তবে কোনোভাবেই আইন নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।
এদিকে, চিকিৎসকদের চার দফা দাবি যৌক্তিক বলেছেন ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বিকেলে চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি এ কথা বলেন। হাসনাত বলেন, ডাক্তারদের ওপর যে অযাচিত হামলা হয়েছে, তা নিন্দাজনক। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম চিকিৎসকদের সঙ্গে বসেছেন। আশা করি, এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসবে।
তিনি বলেন, ডাক্তারদের যে অবদান ও পেশাদারিত্ব, তাকে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। ঢাকা মেডিকেলে, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে, চট্টগ্রাম মেডিকেলে মিডফোর্ডে, মুগদা মেডিকেলে ডাক্তারদের ওপর হামলা হয়েছে। যারা এইসব হামলার সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হোক। আমরা চাই ডাক্তারদের পেশাদারিত্বের জায়গা যেন প্রশস্ত থাকে। তারা যেন নিরাপদ অনুভব করে। তা না হলে তারা সেবা দিতে পারবে না।