১৪ই মার্চ, ২০২৫

নিজের গা বাঁচাতে নিজ দলের বিরুদ্ধে মামলা যুবলীগ কর্মীর, বাদ যায়নি শেখ হাসিনাও

শেয়ার করুন

কফিল উদ্দিন। চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কর্মী। কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থবিষয়ক সম্পাদক এবং মহানগর যুবলীগের শীর্ষ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নিজের ফেসবুক আইডি ও হোয়াটসঅ্যাপ প্রোফাইলে বাবরের সঙ্গে তার ছবিও আছে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে নগর ছাত্রলীগ-যুবলীগের মিছিল ও সভা-সমাবেশে নিয়মিত অংশগ্রহণও করতেন। শুধু কি তাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার একটি মামলায় নিজেও আসামি। এছাড়া পুলিশের খাতায় রয়েছে অস্ত্র, ছিনতাইয়ের আরও ৩ মামলা।

অথচ সেই কফিল আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মাত্র তিন মাসের মাথায় ভোল পাল্টিয়ে রাতারাতি বিএনপির সমর্থক বনে যান। রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের সমর্থক কফিল নিজের গা বাঁচাতে নিজ দলের বিরুদ্ধেই মামলা করে বসলেন। ওই মামলা থেকে বাদ যায়নি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে তার নেতার নেতারাও।

আশ্চার্যজনক বিষয় হচ্ছে, কফিল উদ্দিন নিজেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘বিপ্লবী’ এবং আহত হওয়ার দাবি করে গত সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

কফিলের করা মামলার অন্য আসামিরা হলেনÑ সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক সংসদ সদস্য এম এ মোতালেব, মজিবুর রহমান, জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ, পিবিআইয়ের সাবেক প্রধান বনজ কুমার মজুমদার, ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ, বিপ্লব কুমার সরকার, সাবেক পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানার সাবেক ওসি ওবায়দুল হক, নেজাম উদ্দিন, মোহাম্মদ মহসীন, জাহিদুল কবির, এসআই বোরহান উদ্দিন, খাজা এনাম এলাহীসহ ২৬ পুলিশ কর্মকর্তা। এ ছাড়া নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, ওয়াসিম উদ্দিন, মোবারক আলীকেও আসামি করা হয়।

হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের সঙ্গে যুবলীগ কর্মী কফিল উদ্দিন

‘যুবলীগ নেতা শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে মামলা করেছেন’, বিষয়টি এখন আদালত পাড়া থেকে শুরু করে গণমাধ্যম পাড়া, সবার মুখে মুখে। জানতে চাইলে ফ্যাস্টিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচারের প্রতিবাদ করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতা জীবন দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। আমি নিজেও আন্দোলনে অংশ নিয়েছি। কোনো সুযোগ সুবিধার জন্য মামলা করেনি।

মামলার অভিযোগে কফিল উদ্দিন উল্লেখ করেন, গত ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট গোলচত্বরে হাজার হাজার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে বাকি আসামিরা ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালায়। এ সময় ককটেলও বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে কফিল হাতে আঘাত পান। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনায় জড়িত আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ ও সুস্থ হতে সময় লাগায় মামলা করতে দেরি হয়।

কফিল উদ্দিককে আওয়ামী লীগের ‘চিহ্নিত’ সমর্থক হিসেবে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার মামলার বাদী রাইয়ান। গত ১০ নভেম্বর কোতোয়ালী থানায় কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন ড্যাফোডিল ইনস্টিটিউট অব আইটি চট্টগ্রামের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের এই ছাত্র।

কফিল উদ্দিনকে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত সমর্থক দাবি করে রাইনা গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি ৪ আগস্ট সন্ত্রাসীদের সাথে মিলে আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তিনি চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সমর্থক।
যদিও কফিল উদ্দিনও রাইহানের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা দায়ের করেছেন। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় এই রাইয়ানকেও আসামি করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে রাইহান বলেন, আমি কফিল উদ্দিন নামে ওই ব্যক্তির সামনে গেলে তিনি আমাকে চিনবেনও না। অথচ তার মামলায় আমি আসামি।

দু’জনের পাল্টাপাল্টি মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, রাইহানের করা মামলার ২৩ নম্বর আসামি কফিল উদ্দিন। আর কফিল উদ্দিনের করা পাল্টা মামলায় ৯২ নম্বর আসামি রাইহান। যেখানে শেখ হাসিনা ছাড়াও ২৬ পুলিশ কর্মকর্তাসহ মোট ১৮৭ জনকে আসামি করা হয়।

এদিকে, গতকাল স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এক বক্তব্যের সঙ্গে কফিল কাণ্ডের হুবহু মিল পাচ্ছেন অনেকে। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, ‘আগে ভুয়া মামলা করত পুলিশ। এখন করছে পাবলিক (জনগণ)।’

মহানগর নিউজ/এআই

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন