১৪ই মার্চ, ২০২৫

ক্যাম্পে থাকা ও খাবারের তীব্র সংকট

সক্রিয় দু’দেশের দালাল চক্র, নতুন করে অনুপ্রবেশ করেছে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা!

ফাইল ছবি

শেয়ার করুন

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত থেমে নেই। গত সপ্তাহে দেশটির মংডু শহরে সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ে বলি হচ্ছেন সাধারণ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। যা বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে দেখা যাচ্ছে অগ্নিকাণ্ডের দৃশ্য। গোলাগুলিসহ বিকট বিস্ফোরণের শব্দও ভেসে আসছে। ফলে নাফ নদীসহ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সীমান্তরক্ষীদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে দুই দেশের সক্রিয় দালালদের সহযোগিতয় অনুপ্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। এ ক্ষেত্রে দালাল চক্র মাথাপিছু ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের এপারে আসতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের হত্যার পাশাপাশি পুড়িয়ে দিচ্ছে তাদের ঘর-বাড়ি। এ অবস্থায় রোহিঙ্গারা জীবন বাঁচাতে নাফ নদীসহ বিস্তীর্ণ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে পালিয়ে আসছে।

সূত্রে জানা গেছে, দালাল চক্রগুলো টেকনাফ সীমান্তের ২০টি পয়েন্ট- জাদিমোরা, দমদমিয়া, কেরুনতলি, বরইতলি, নাইট্যংপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, মৌলভীপাড়া, নয়াপাড়া, শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, ঘোলারচর, খুরেরমুখ, আলীর ডেইল, মহেষখালীয়াপাড়া, লম্বরী, তুলাতলি, রাজারছড়া, বাহারছড়া উপকূল দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে। সীমান্তের দায়িত্বরত বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কৌশলে অনুপ্রবেশের পর ওইসব রোহিঙ্গার অনেকেই উখিয়া ও টেকনাফ ক্যাম্পে পরিচিত আত্মীয়স্বজনের আশ্রয়স্থলসহ টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতারা জানান, এরই মধ্যে ১০ থেকে ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। ওপারে অপেক্ষায় আছে আরো প্রায় অর্ধলাখ। আর এসব রোহিঙ্গাদের পালিয়ে আসতে সহযোগিতা করছে দুই পারের দালাল চক্র। যারা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নিচ্ছে।

এদিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি-কোস্টগার্ড কঠোর অবস্থানে রয়েছে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে। তারা সীমান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর পাশাপাশি আটক করছে দালালদের। কিন্তু ঠিকই দীর্ঘ সীমান্তের কোন না কোন পয়েন্ট দিয়ে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে পড়ছে। তারা এদেশে এসে ক্যাম্পের পুরাতন রোহিঙ্গা স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিচ্ছে। এদিকে বাড়তি রোহিঙ্গাদের থাকা-খাওয়া নিয়ে ক্যাম্পে সৃষ্টি হয়েছে নতুন চ্যালেঞ্জ।

রোহিঙ্গা নাগরিক মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, আমরা নিজেরাই জনপ্রতি মাসে ১৩০০ টাকা রেশন পাই। যা দিয়ে চলা খুবই কষ্ট। তাই বলে আমাদের কাছে আশ্রয়ে আসা রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের তো ফেলে দেওয়া যাবে না। আমরা তাদের না দেখলে কে দেখবে? তারা বিপদ থেকে বাচাঁর জন্য আমাদের কাছে আসছে। আর আমরাই যদি বিপদে ফেলে দেই তাহলে কেমনে হবে। এই অবস্থায় তাদেরকেও সহযোগিতা করা দরকার। নয়ত সবাই কষ্টে পড়ে যাব।

বিজিবি’র টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে টহল জোরদার রয়েছে। প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে একজন রোহিঙ্গাও যেন অনুপ্রবেশ করতে না পারে। এছাড়া দালালদের বিরুদ্ধেও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ড সদস্যরা কাজ করছেন এবং অনেক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছেন তারা। তবে টেকনাফ উপজেলায় অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের যারা বাসা ভাড়া দিয়েছে বা দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন