নিজ এলাকা চট্টগ্রামের পটিয়ায় নানান ধর্মীয় কাজে দান-খয়রাত করে সুনাম কুড়িয়েছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (মাসুদ)। সেই এস আলমের ছিল মদের ব্যবসা! পার্টনার ছিলেন এমপি আনার হত্যাকাণ্ডে আলোচিত সোনা ও হীরা চোরাকারবারির ডনখ্যাত দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। শুধু তাই নয়, নানান কারসাজি করে গত সাত বছরে তারা সরকারের প্রায় ২৮৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে।
অভিযোগ আছে, এস আলমের আমদানি করা মদে ভেজাল ছিল। তাদের মদ পান করে অনেকেই অসুস্থ এবং মৃত্যু হয়েছে বলেও জানা গেছে।
সূত্রে জানা গেছে, ‘সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড’ নামে একটি মদ আমদানি-সরবরাহ করা কোম্পানির ৭৫ শতাংশ শেয়ার এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ছিল।

সেই সূত্র বলছে, মদ বিক্রির কোম্পানি সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড বা এসটিএলে চট্টগ্রামভিত্তিক বৃহৎ ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের সঙ্গে পার্টনার ছিলেন আলোচিত সোনা ও হীরা ব্যবসায়ী দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ক্ষমতার পালাবদলে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিপন্থী হয়ে ওঠেন দিলীপ। এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ৭৫ শতাংশ শেয়ার থাকার পরও মাত্র ২৫ শতাংশ শেয়ারের মালিক হয়ে দিলীপ রাতের আঁধারে নিয়ন্ত্রণে নেন পুরো সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড। ওই ঘটনার পরই এস আলম গ্রুপের মদ কেনাবেচায় সম্পৃক্ততার খবরটি জানাজানি হয়। নানা ধর্মীয় কাজে সুনাম কুড়ানো এস আলম গ্রুপের মদ কেনাবেচা কাণ্ড চট্টগ্রামে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র জানিয়েছে, সাবের ট্রেডার্স কূটনীতিকদের ব্যবহারের জন্য আনা বন্ডেডওয়্যার হাউস সুবিধার মদ কালোবাজারে বিক্রি করে দিত। এতে গত সাত বছরে সরকারের প্রায় ২৮৩ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি।
এনবিআর সূত্র বলছে, বর্তমানে সারা দেশে দেড় শতাধিক লাইসেন্স পাওয়া মদের বার রয়েছে। যার ৮০ শতাংশ রাজধানীতে। এ ছাড়া বন্ড সুবিধায় আসা মদ কূটনৈতিক ব্যক্তিত্বরা (প্রিভিলেজড পারসন) বেশি কেনেন। আমাদের কাছে বিভিন্ন সময়ে তথ্য এসেছে, তারা ওই মদের একটি অংশ বাইরে বিক্রি করে দেন। এ ছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি, চোরাইপথেও মদ আসে। এসব মদ সরাসরি যায় দিলীপের মদ বিক্রির কোম্পানি সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড বা এসটিএলে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে বন্ড সুবিধায় ছয় ধরনের মদ বা অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় আসে। আমদানি করা মদের মধ্যে রয়েছে বিয়ার, স্পিরিটজাতীয় পানীয়, হুইস্কি, রাম ও টাফিয়া, গিন ও জেনিভা, ভদকা, লিকারস ও করডিয়ালস। আর এনবিআরের অধীন কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অফিস শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় থাকা ছয়টি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বারে মদের আমদানি ও সরবরাহ দেখভাল করতো।
এগুলো হলো- সাবের ট্রেডার্স লিমিটেড, ইস্টার্ন ডিপ্লোম্যাটিক সার্ভিসেস, টস বন্ড, ন্যাশনাল ওয়্যারহাউজ, ঢাকা ওয়্যারহাউজ ও এইচ কবির অ্যান্ড কোম্পানি। এর মধ্যে পাঁচটি গুলশানে এবং একটি মহাখালীতে অবস্থিত।
