চতুর্থ দিনের শুরু থেকেই ড্রাইভিং সিটে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। মোহাম্মদ রিজওয়ান যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন ততক্ষণ ২০০৩ সালের মুলতানের সেই স্মৃতি তাড়া করেছিল। শেষ পর্যন্ত খানিকটা প্রতিরোধ গড়লেও মুলতানের ইনজামাম হতে পারেননি এই উইকেটকিপার ব্যাটার। ফলে প্রথমবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে অধরা সেই জয় অবশেষে ধরা দিয়েছে। সেটাও আবার প্রতিপক্ষের ঘরের মাঠে, ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে।
টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারাল বাংলাদেশ। বাকি থাকল শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সব মিলিয়ে ২০তম।

চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ চালকের আসনে থাকলেও শেষ দিনে জিততে হলে দুর্দান্ত বোলিং করতে হতো বাংলাদেশকে। সাকিব আল হাসান–মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে সে কাজটা হয়ে যায়। পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয়ে যায় ১৪৬ রানে। ৩০ রানের মামুলি লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশের দুই ওপেনার জাকির হাসান ও সাদমান ইসলাম ঠান্ডা মাথায় খেলা শেষ করে আসেন। ওভারে ১৮ রান তুলে ফেলা বাংলাদেশের জিততে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। সপ্তম ওভারের তৃতীয় বলে কোনো উইকেট না হারিয়ে বাংলাদেশ জয় নিশ্চিত করে ফেলে। আর তাতেই গড়া হয় ইতিহাস।
১ উইকেটে ২৩ রানে আজ পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে পাকিস্তান। খেলা শুরুর দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় স্বাগতিকেরা। উইকেট হারানোর পতনের ধারা পাকিস্তান আর ঠেকাতে পারেনি। মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৫১ রানের প্রতিরোধও বাংলাদেশের বোলারদের আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। দুই অভিজ্ঞ স্পিনার সাকিব–মিরাজের ভেলকিতে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস থেমে যায় ১৪৬ রানেই। মিরাজ নেন ৪ উইকেট, সাকিবের উইকেট ৩ টি।
শেষ দিনে বাংলাদেশের বোলাররা ছড়ি ঘোরালেও এই ম্যাচের নায়ক আসলে মুশফিকুর রহিম, যাঁর ১৯১ রানের দ্যুতিময় ইনিংস পাকিস্তানে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে ঐতিহাসিক এক জয়। আর তাতেই ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ—বিদেশের মাঠে টেস্টে এমন স্কোরলাইন যে হরহামেশা করতে পারে না। বিদেশের মাঠে এ দিয়ে মাত্র ৭ম টেস্ট জিতল বাংলাদেশ।
রাওয়ালপিন্ডিতে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত। সফরকারীদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩ উইকেটে ১৬ রানে পরিণত হয় পাকিস্তান। সেই ধাক্কা সামলে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান টেস্ট ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ১৭১ রান করে অপরাজিত থাকেন। স্বাগতিকদের রানের পাহাড় টপকে প্রথম ইনিংসে ৫৬৫ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। ডাবল সেঞ্চুরি না পেলেও রেকর্ড গড়া ১৯১ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। ৩৪১ বলের ইনিংসে মেরেছেন ২২ চার ও ১ ছক্কা। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তাঁর হাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৪৪৮/৬ (ডিক্লে) ( রিজওয়ান ১৭১*, শাকিল ১৪১; হাসান ২/৭০, শরীফুল ২/৭৭)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫৬৫ (লিড ১১৭) ( মুশফিক ১৯১, সাদমান ৯৩; নাসিম ৩/৯৩, শাহিন ২/৮৮)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস: ১৪৬ (লিড ২৯) (রিজওয়ান ৫১, আব্দুল্লাহ ৩৭; মিরাজ ৪/২১, সাকিব ৩/৪৪)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩০) ৬.৩ ওভারে ৩০/০ (জাকির ১৫ *, সাদমান ৯ *)
ফল: বাংলাদেশ ১০ উইকেটে জয়ী