চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের ১৩ নং মায়ানী ইউনিয়নে ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক শেখ কালা মিয়া বাড়ি জামে মসজিদের নাম এবং পুনঃনির্মাণ কাজের উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ফলে মসজিদটির প্রতিষ্ঠাতার বংশধর, বাড়ি এবং এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, মসজিদের পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু করলে স্থানীয় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি ২০০ বছরের পরিচিত নামটি পরিবর্তন এবং মসজিদের নিয়ন্ত্রণে নিতে উঠেপড়ে লাগে। পরে উপজেলা প্রশাসন দুই পক্ষের সম্মতিতে নতুন নাম “পশ্চিম মায়ানী কালা মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ” নির্ধারণ করেন। উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে ফিরে অভিযুক্তরা সে নাম থেকে “বাড়ি” শব্দটি বাদ দিয়ে “পশ্চিম মায়ানী কালা মিয়া জামে মসজিদ” নামে ব্যানার টাঙিয়ে এক পাক্ষিক পুনঃনির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন। শুধু তাই নয়, জোরপূর্বক মসজিদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। যা উপজেলা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানোর সমান।
শেখ কালা মিয়ার বংশধররা জানান, ঐতিহ্যবাহী ”শেখ কালা মিয়া বাড়ি জামে মসজিদটি” প্রায় ২০০ বছরের অধিক পুরনো মসজিদ। আমাদের পূর্বপুরুষ শেখ কালা মিয়া তার নিজ জায়গায় নিজ ব্যয়ে এই মসজিদ নির্মাণ করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত শেখ কালা মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ নামে পরিচিত। তারই ধারাবাহিকতায় আর.এস ও পি.এস খতিয়ানে মন্তব্যে শেখ কালা মিয়ার ওয়ারিশ ও উত্তরাধিকারীদের নামে এবং জায়গার ধরনে মসজিদ হিসেবে খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করেন।

তারা আরো জানান, গত ১০ জানুয়ারি মসজিদের পুরনো ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়। এরপর ২০ জানুয়ারি পুনঃনির্মাণ কাজ শুরু হলে এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি অজুহাত দেখিয়ে “পশ্চিম মায়ানী জামে মসজিদ” নামে একটি ব্যানার টাঙিয়ে মসজিদের নাম পরিবর্তন করতে হবে মর্মে চলমান কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় পর্যন্ত গেলে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাইফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেন। পরে তিনি সরজমিনে তদন্ত ও মসজিদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে উভয় পক্ষের সম্মতিতে ‘পশ্চিম মায়ানী কালা মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ’ নাম নির্ধারণ করে দেন। এতে উভয় পক্ষ স্বাক্ষরও করেন। স্বাক্ষরের শেষ পর্যায়ে ওদের মধ্যে কয়েকজন সিদ্ধান্ত মানি না বলে চলে যাযন (যা তাদের পূর্ব পরিকল্পিত প্লান ছিল)। পরে গত ১৯ এপ্রিল শনিবার তারা একপাক্ষিকভাবে জোরপূর্বক “পশ্চিম মায়ানি কালা মিয়া জামে মসজিদ” নামে ব্যানার টাঙিয়ে মসজিদের কাজ উদ্বোধন করেন। এবং প্রচার শুরু করেন যে, উপজেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ শুরু করেছেন। কিন্তু, এটা তো আসলে সত্য ছিল না।
গতকাল বুধবার (২৩ এপ্রিল) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবারো উভয় পক্ষকে ডেকে সিদ্ধান্ত দেন যে, মসজিদটির নাম হবে “পশ্চিম মায়ানী কালা মিয়া জামে মসজিদ”। শেখ কালা মিয়ার বংশধররা এ সিদ্ধান্ত মানি না বলে শুনানির স্থল ত্যাগ করেন। তাদের অভিযোগ, শুনানিতে তাদের কথা বলতে দেয়া হয়নি। এক তরফাভাবে শুনানির রায় দেওয়া হয়েছে।
এ সিদ্ধান্তের পর মসজিদ কমিটির একাংশ এবং স্থানীয় জনগণের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানান, উভয় পক্ষের সম্মত নামকে উপেক্ষা করে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা পুরোপুরি একতরফা ও রাজনৈতিক প্রভাবিত।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এ ধরনের সিদ্ধান্ত এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে পারে।

শেখ কালামিয়ার বংশধররা জানান, এলাকায় কালা মিয়া এবং কালা মিয়া সওদাগর নামে আরো কয়েকজন ব্যক্তি আছেন। ফলে এ নামে মসজিদ হলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন বলেছেন, দুই পক্ষ, মসজিদ কমিটি এবং এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে নামটি নির্ধারণ করে দিয়েছি। আশা করছি, এ নিয়ে আর কোনো বিতর্ক থাকার কথা নয়।