‘আমার দুই মেয়ের ফেসবুক পোস্টের জন্যে যদি আওয়ামী লীগের আজকের এই পরিণতি হয় তাহলে বাবা হিসেবে আমি এর দায় নিচ্ছি। এটা পুরোপুরি আমার ব্যর্থতা’।
গতকাল মঙ্গলবার (৪ মার্চ) রাতে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী এক ফেসবুক লাইভে এসে এ মন্তব্য করেন।
জুলাই আন্দোলের সময় ছাত্র জনতার পক্ষে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিল সাবেক এই প্যানেল মেয়রের দুই মেয়ে। সম্প্রতি সেই সব ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়। এরপর আ.লীগ এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যাপক সমালোচনা করেন। মূলত, সেই সমালোচনা এবং অন্যান্য বিষয়ে ফেসবুক লাইভে এসে কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা ছাত্রদের বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছি। কারণ আমরা ছিলাম মোহে, টাকার মধ্যে, গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে, ব্যক্তি পূজার মধ্যে। এই রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ আজ আমাদের এই পরিণতি।
তবে তার লাইভে এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে তিনি এই আন্দোলনকে জামাত শিবিরের আন্দোলন না বলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বলেছেন। যেখানে শেখ হাসিনা এটাকে জুলাই ষড়যন্ত্র বলে থাকেন। যিনি নিজের দুই মেয়েকে বোঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি কিভাবে কর্মীদের গাইড করবেন সেই প্রশ্ন তোলেন অনেকে।
নিজের মেয়েদের জুলাই আন্দোলনের পক্ষে পোস্ট দেওয়াকে গণতন্ত্রের চর্চা বলে লাইভে দাবি করেছেন সাবেক প্যানেল মেয়র হাসনি। তার এই বক্তব্যের সমালোচনায় কমেন্টে একজন লিখেন, তাহলে কি আওয়ামী লীগের আমলে গণতন্ত্র ছিল না?
নিজের সমালোচকদের উদ্দেশ্যে হাসনী লাইভে বলেন, আপনারা কী করেছেন সেটা চিন্তা করুন। আমার একটি পৈত্রিক বিল্ডিং, দুইটি ফ্ল্যাট আছে। এর বাইরে আর কোনো স্থাবর সম্পদ এবং কোনো একাউন্টে কোটি টাকা থাকলে আমি তা জনগণের জন্য দিয়ে দেবো।
এই সময় তিনি ক্ষমতা অপব্যবহার করে কোথাও কোনো টেন্ডার বাণিজ্য কিংবা টাকা পয়সার জন্য গিয়েছেন বা তদবির বাণিজ্যে ছিলেন এমন উদাহরণ কেউ দেখাতে পারবে না বলেও লাইভে দাবি করেন।

এই সময় তিনি তার সমালোচকদের জায়গা দখলসহ চাঁদাবাজি এবং গণপিটুনি ও মামলার আসামি হওয়ার অভিযোগ তোলেন।
বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান সম্পর্কে তার মামা এই সূত্র ব্যবহার করে তিনি টাকা পয়সা অর্জনের যে অভিযোগ উঠেছে সেটাও নাকোচ করে চ্যালেঞ্জ ছুড়েন বলেন এইসব অপপ্রচার এবং মিথ্যা।
লাইভে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে অনেক নেতাকর্মী টাকা নিয়ে লিফলেট বিলি না করে ছবি তোলে বাসায় গিয়ে ফেসবুকিং করেছেন। ট্রাক ভাড়া করে আনন্দ করেছেন। কিন্তু জনগণের কাছে গিয়ে শেখ হাসিনার উন্নয়ন আর বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা ও বুঝাতে অপারগ হয়েছেন। যার কারণে আওয়ামী লীগের আজ এই পরিণতি।
তিনি নিজে গ্রুপিংয়ের উর্ধ্বে উঠে আবারও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ চান অথচ যারা এখন তার সমালোচনা করছেন তারা এখনও গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে ব্যস্ত বলেও জানান।
তিনি লাইভের শেষাংশে নিজেকে সবার ভাই বন্ধু, বঙ্গবন্ধুর সৈনিক বলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও বাংলাদেশে নৌকার জয় হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।