১৪ই মার্চ, ২০২৫

বিপাকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ— সেবার বিনিময়ে বছরে ৪৫ কোটি নয়, ১৬০ কোটি টাকা চায় চসিক!

শেয়ার করুন

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ‘নজর পড়েছে’ দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের উপর। সেবার বিনিময়ে বাণিজ্যিক পৌরকর হিসেবে বছরে ১৬০ কোটি টাকা দাবি করেছে চসিক। শুধুই পৌরকর নয় ভারী যানবাহনের চলাচলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও কালভার্ট মেরামতের জন্য লাভের ১ শতাংশ কর দিতে দাবি দিয়েছে চসিক। যেখানে শুধুই সেবাখাতে ২০২০ সালের আগে দিতে হতো বছরে মাত্র ৩৯ কোটি টাকা। বিগত সরকারের সময় ২০২০ সালে আইন সংশোধনের মাধ্যমে ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে বছরে ৪৫ কোটি টাকা কর দেওয়া শুরু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের পর মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ডা. শাহাদাত হোসেন সিটি করপোরেশনের আয় বাড়াতে বন্দরের পৌরকর পুনঃমূল্যায়নের সিদ্ধান্ত নেন। ফলে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর এ নিয়ে চলছে চিঠি চালাচালি এবং দর কষাকষি।

সূত্রে জানা গেছে, পুনঃমূল্যায়নের অংশ হিসেবে ১ কোটি ৪০ লাখ ৭৭ হাজার বর্গফুট স্থাপনার পৌরকর নির্ধারণ করা হয় ১৬০ কোটি ১৬ লাখ টাকা। পরিশোধিত ৪৫ কোটি টাকা বাদ দিয়ে বাকি ১২৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে চসিক।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, উন্নত বহু দেশের বন্দরগুলো নিজ নিজ শহরের উন্নয়নে লাভের একটা অংশ প্রদান করলেও চট্টগ্রাম বন্দর এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। প্যাকেজ পৌরকর ছাড়া আর তেমন কোনো কর পরিশোধ করতে হয় না। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে আয়ের ১ শতাংশ চেয়েছে সিটি করপোরেশন।

সিটি করপোরেশনের মতে, চট্টগ্রাম শহরের সড়কগুলোর ধারন ক্ষমতা ৬ থেকে ১০ মেট্রিক টন হলেও বন্দরের কারণে ৫০ থেকে ৬০ মেট্রিক টন যানবাহনও চলাচল করছে। আর এতে সড়কগুলোর স্থায়ীত্ব কমে যাওয়ায় সংস্কারে খরচ বেড়ে যাচ্ছে চসিকের।

এ প্রসঙ্গে সিটি করপোরেশনের এক বৈঠকে যেকোনো উপায়ে এই টাকা আদায় করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, আমি যতদিন আছি, বন্দর থেকে এই মাশুল সিটি করপোরেশনকে আমি নিয়ে দেব।

বন্দরের বিদ্যমান আইনে ১ শতাংশ সিটি করপোরেশনকে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ না থাকলেও বাণিজ্যিক পৌরকর যাচাই-বাচাইয়ের জন্য উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি নিয়ে পৃথক দুইটি কমিটি গঠন করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এ প্রসঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্ম ওমর ফারুক বলেন, বোর্ডের সিন্ধান্ত অনুযায়ী একটা যৌথ কমিটি করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে কমিটি প্রক্রিয়াধীন আছে, কর্তৃপক্ষ এটা নিয়ে কাজ করছে। এই কমিটি দুটি পর্যালোচনা করে সে সিদ্ধান্ত নেবে তা পরবর্তীতে দুই প্রতিষ্ঠান আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

এদিকে, সেবার বিনিময়ে এই কর দাবি করতে পারেন বলে মনে করেন নাগরিক সমাজও। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সভাপতি প্রফেসর ড. সিকান্দার খান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বছরে ৪ থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা আয় করে। এর মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধসহ সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে বছরে ৮০০ থেকে ১০০০ কোটি টাকা জমা হয় বন্দরের নিজস্ব তহবিলে। সেখান থেকে সেবার বিনিময়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে এই কর দেওয়াটা যৌক্তিক।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন