সম্প্রতি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় ‘বিডিআর ম্যাসাকারের অন্যতম সন্দেহভাজন কর্নেল শামস’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন লিড করে। সেই প্রতিবেদনে কর্নেল শামসের বিরুদ্ধ আনা অভিযোগের জবাব পর্ব আকারে দেওয়া শুরু করেছেন তিনি।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে এ কথা জানা।
শুরুতে তিনি লেখেন, বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে ‘আমাকে জড়িয়ে’ ২০২৫ সালে ২১শে পদক বিজয়ী জনাব মাহমুদুর রহমানের বহুল প্রচারিত “আমার দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সম্পর্কিত বিষয়ে আমার ফেসবুক পেইজ থেকে প্রতিদিন ১টা করে টপিকের উপরে আমার বক্তব্য তুলে ধরবো। আশাকরি সবাই পড়বেন ও মূল্যবান মন্তব্য করবেন। ধন্যবাদ সবাইকে!

আমার দেশ প্রতিবেদন: ‘তিনি ক্যাডেট কলেজ নয় সাধারণ কলেজ থেকে পড়াশোনা করে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।’
আমার বক্তব্য: প্রতিবেদক ‘ক্যাডেট কলেজ’ ও ‘সাধারণ কলেজ’ বলতে কি বুঝাতে চেয়েছেন? বৈষম্যবিরোধীদের ছায়াতলে থেকে নিজেইতো ‘বর্ণ-বৈষম্য’ সৃষ্টি করছেন। ক্যাডেট কলেজের ছাত্ররা ‘আই এ’ পাশ করেই কী পৃথিবী সেরা ‘জ্ঞানী’ ও ‘মহাপণ্ডিত ব্যক্তিতে’ পরিণত হয়? আর আমাদের মত সাধারণ (ভাঙাচোরা) স্কুল কলেজের ছাত্ররা কি ওনাদের গৃহপালিত পশু হিসেবে থাকতে হবে? আমি সারাজীবন প্রথম হয়েছি। ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। ১৪তম বিএমএ লং কোর্সে ১৩৫ জন (১০৫ জন কমিশন পাই) ক্যাডেটের মধ্যে (৩৯ জন ডবল স্ট্যান্ড করা ও ৭১ জন ক্যাডেট কলেজের) একাডেমিক ও সামরিক সকল বিষযেই প্রথম সারিতেই জায়গা করে নিয়েছি। অধিকাংশকে পিছে ফেলে বিএমএ তে ‘ল্যান্স কর্পোরাল’ ও ‘ক্রস বেল্ট হোল্ডার (ব্যাটালিয়ন কোয়ার্টার মাস্টার সার্জেন্ট)’ হয়েছি। সাঁজোয়া কোরে প্রথম ক্যাডেট হয়ে কমিশন লাভ করেছি ।
বিএমএ-তে আমার সকল প্লাটুন কমান্ডারগণই ক্যাডেট কলেজের ছিলেন। প্রতিবেদকের মত “অসাধারণ” কলেজ থেকে পাশ করা কমান্ডারগণই আমাকে তাদের কলেজের ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে রেখেছিলেন। সামরিক জীবনে ৪ বার (২ বার পাকিস্তান ১৯৯৮ ও ২০০০, একবার সৌদি আরব, ও একবার যুক্তরাজ্যে) উচ্চতর প্রশিক্ষণে বিদেশ গমন করেছি। স্টাফ কলেজে “Highly Demanding” অর্জন করেছি। জাতিসংঘ মিশনে বসনিয়া-ক্রোয়েশিয়াতে “সামরিক পর্যবেক্ষক” ও লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘ ফোর্সেস হেড কোয়ার্টারে “স্টাফ অফিসার” হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার সময়ে ওয়াশিংটন ডিসিতে ২০১৩ সালে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলী করা হয়েছে।
আমেরিকাতে পৃথিবী সেরা দুটো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। GW MBA-তে (জিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৬১ পেয়ে) দ্বিতীয় হয়ে প্রমান করেছি যে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ছাত্র/ছাত্রীরা শুধুমাত্র সামাজিক অসুস্থ্যতা, অস্থিরতা, ও বৈষম্যের কারণে ক্যাডেট কলেজের সুবিধাপ্রাপ্ত ছাত্রদের চেয়ে পিছিয়ে থাকি। হার্ভার্ডে এক্সিকিউটিভ কোর্স করেছি এবং ফেলো হিসেবে প্রায়শই হার্ভার্ড বিশ্বাবিদ্যালয়ের কেনেডি স্কুলে বিভিন্ন ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে চলেছি। আমেরিকা “এক্সট্রা অর্ডিনারি এবিলিটিতে” আমার গ্রিন কার্ড অনুমোদন করেছে। আমার লিখা দু’টো বই পৃথিবী সেরা বুক সেল প্লাটফর্মগুলোতে বিক্রি হচ্ছে, ১টি বই আমেরিকার দু’টো বিশ্ববিদ্যালয়ে রিডিং বুক হিসেবে সমাদৃত হয়েছে। এসবের মধ্যেও যতটুকু সম্ভব দলমত নির্বিশেষে আমি আমার মিরশরাই এর সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে চেষ্টা করি। সুবিধাপ্রাপ্ত ক্যাডেট কলেজের “আত্মকেন্দ্রিক” ছাত্রদের মধ্যে কতজন এ সফলতা অর্জন করেছে?
অসাধারণ (ক্যাডেট) কলেজগুলোর ১০% সুযোগ পেলেও বিজ্ঞ প্রতিবেদকের ভাষায় “সাধারণ” স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের চেয়ে অনেক বেশী ভালো করতো – দেশ উপকৃত হতো। সাধারণ কলেজের সুবিধাবঞ্চিত ছাত্র/ছাত্রীদের প্রতি আপনাদের এত ঘৃণা, অবহেলা, অনীহা, বা অবজ্ঞা কেন?

এ সময় তিনি ইউএস কংগ্রেসম্যান ডন বংকারের সঙ্গে একটি ছবিজুড়ে লেখেন, ছবি (পুরোন): আমি ও ইউএস কংরেসম্যান ডন বংকার নিজেদের লিখা বই একে ওপরকে গিফট করছি।