নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের প্রেক্ষাপটে ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশেষত, সদস্য সচিব পদ নিয়ে রয়েছে একাধিক দাবিদার । যাদের মধ্যে রয়েছে গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা নেতারাও। নতুন দলের শীর্ষ এ পদ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্দরে চলছে মতানৈক্য। যদিও আহ্বায়ক পদ নিয়ে কোনো বিতর্ক নেই। তবে সদস্য সচিব পদের জন্য একাধিক নেতা দাবি তুলেছেন, যার ফলে শুরুতেই অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।
আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল। দলটি শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করবে এবং কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, যিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা। তবে তিনি দলের দায়িত্ব গ্রহণের আগেই উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। নাহিদের বিষয়ে নেতাদের মধ্যে ঐকমত্য থাকলেও সদস্য সচিব পদ নিয়ে বিভক্তি দেখা যাচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, একটি অংশ চাইছে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হোক, যিনি বর্তমানে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব। অপর একটি অংশের দাবি, আন্দোলনের অন্যতম নেতা আলী আহসান জুনায়েদকে সদস্য সচিব করা হোক। তিনি বর্তমানে নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এবং মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও এই পদে নিজের দাবী তুলেছেন। যদি আখতার ও জুনায়েদের মধ্যে কেউ এ পদে আসতে না পারেন, তবে নাসীর বা সারজিসের নাম বিবেচনায় নেওয়া হবে।

এদিকে, এমন বিভক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। একজন ছাত্রনেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এমন পরিস্থিতি তৃণমূল পর্যায়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে, যার ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন দলের প্রতি আস্থা নষ্ট হতে পারে। আমরা চাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব নির্বাচিত হোক, কিন্তু কেউ যদি নিজেকে একমাত্র যোগ্য মনে করেন, তাহলে তা ঠিক নয়।
অন্য এক নেতা জানান, কিছু নেতারা শীর্ষ চার পদের দুটি পদের দাবি তুলছেন। কিন্তু আমাদের চিন্তা করতে হচ্ছে, এসব নেতার মধ্যে সাধারণ মানুষের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু।
তিনি আরও বলেন,আমরা শুরুতেই সংগঠনকে বিতর্কিত করতে চাই না।
এদিকে, আখতার ও জুনায়েদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরছেন। তারা লিখছেন, আখতারকেই তারা নেতা হিসেবে মেনে নেবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসুদ তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, আখতার হোসেনের হাত ধরেই আমরা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনীতি করেছি। ঢাবি ক্যাম্পাসে একক নেতৃত্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি। তিনি বারবার হামলার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু কখনো সঙ্গীদের ছেড়ে যাননি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সানজানা আফিফা অদিতি এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মধ্যে সংগঠনের শীর্ষ পদগুলো নির্ধারণে সবার মতামত নেয়ার প্রয়োজন। যদি এক বা দুই ব্যক্তি সব সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমি সেই দলের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী কাজ করতে পারব না।
নতুন দলের আত্মপ্রকাশের আগে এমন বিভাজন ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এটি রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন ধরনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।