১৩ই মার্চ, ২০২৫

এস আলমের ছেলেসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কর্মচারীকে ব্যবহার করে ইসলামী ব্যাংকের ১১শ’ কোটি টাকা লোপাট করল এস আলম

ফাইল ছবি

শেয়ার করুন

ইসলামী ব্যাংক চাক্তাই শাখা থেকে তিন বছরে এক হাজার ৯২ কোটি টাকা লোপাট করেছে এস আলমসহ পুরো পরিবার। তাও নিজেদের প্রতিষ্ঠানের বেতনভুক্ত কর্মচারী গোলাম সারওয়ার চৌধুরীর নামে। দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্তে এ তথ্য উঠে আসে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুদকের চট্টগ্রামের সমন্বিত কার্যালয়-১ এ বাদী হয়ে মামলা করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক ইয়াসিন আরাফাত। মামলায় আসামি করা হয় এস আলমের ছেলেসহ ৫৮ জনকে।

এদিকে, দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত।

দুদকের ওই মামলায় আসামিরা হলেনÑ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমদ, সাবেক পরিচালক মো. ফসিউল আলম, কাজী শহীদুল আলম, মো. সিরাজুল করিম, জামাল মোস্তফা চৌধুরী, মো. জয়নাল আবেদীন, খুরশীদ উল আলম, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মোহাম্মদ সালেহ জহুর ও মোহাম্মদ সোলায়মান, পরিচালক মো. কামরুল হাসান ও সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা, সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী ও কে কিউ এম হাবিবুল্লাহ, সাবেক ডিএমডি ও চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার মো. মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, মিফতাহ উদ্দিন, মোহাম্মদ আলী ও মোহাম্মদ সাব্বির।

এছাড়াও আসামি করা হয়েছে ব্যাংকটির সাবেক উপব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মো. রেজাউল করিম, বর্তমান উপব্যবস্থাপনা পরিচালক রফিকুল ইসলাম, সাবেক এসইভিপি ও এএমডি মো. আলতাফ হোসেন, এসইভিপি জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের, আবু ছাঈদ মুহাম্মদ ইদ্রিস ও সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ, বিনিয়োগ প্রশাসন বিভাগের প্রধান ও এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন, ব্যাংকের কক্সবাজার শাখার ম্যানেজার আমান উল্লাহ, চট্টগ্রামের চাক্তাই শাখার সাবেক ম্যানেজার ও বর্তমানের এফএভিপি মোহাম্মদ আলী আজগর, চাক্তাই শাখার সাবেক বিনিয়োগ ইনচার্জ খাজা মোহাম্মদ খালেদ, চাক্তাই শাখার প্রধান ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনজুর হাসান, ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জোনের প্রধান মোহাম্মদ ইয়াকুব আলী ও দক্ষিণের অপর জোনপ্রধান ও এসইভিপি মিয়া মোহাম্মদ বরকত উল্লাহকে।

ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে আসামি হয়েছেন মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী, চৌধুরী অ্যান্ড হোসাইন ট্রেড লিংকের মোহাম্মদ এরশাদ হোসাইন চৌধুরী, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং করপোরেশনের মোরশেদুল আলম, মেসার্স ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী, রেইনবো করপোরেশনের রায়হান মাহমুদ চৌধুরী, আনছার এন্টারপ্রাইজের আনছারুল আলম চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের সহিদুল আলম, ফেমাস ট্রেডিং করপোরেশনের আরশাদুর রহমান চৌধুরী, গ্রিন এক্সপোজ ট্রেডার্সের এম এ মোনায়েম, কোস্টলাইন ট্রেডিং হাউসের এরশাদ উদ্দিন, জাস্ট রাইট ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মো. গিয়াস উদ্দিন, এক্সক্লুসিভ বিজনেস হাউসের ফেরদৌস আহম্মদ বাপ্পি, এনেক্স বিজনেস কর্নারের আনোয়ারুল আজম, সেন্ট্রাল পার্ক ট্রেডিং হাউসের মোহাম্মদ মঞ্জুর আলম, জুপিটার ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মোহাম্মদ মামুন, চৌধুরী বিজনেস হাউসের মোহাম্মদ রাসেল চৌধুরী, ডিলাক্সিয়াম ট্রেডিং করপোরেশনের কাজী মেজবাহ উদ্দিন, চেমন ইস্পাত লিমিটেডের পরিচালক মুহা. নজরুল ইসলাম, এমডি মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের এমডি মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান, গ্লোবাল ট্রেডিং করপোরেশনের এমডি মো. রাশেদুল আলম ও পরিচালক মোহাম্মদ আবদুস সবুর,

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০২১ সালের নভেম্বরে এস আলমসংশ্লিষ্ট মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের মালিক গোলাম সরওয়ার চৌধুরী চট্টগ্রামের ইসলামী ব্যাংকের চাক্তাই শাখায় ঋণের জন্য আবেদন করেন। পরের মাসে শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা অনুমোদন করেন। মিথ্যা তথ্যের ওপর জাল কাগজে এ ঋণের জন্য আবেদন করে মুরাদ এন্টারপ্রাইজ। পরে এ ঋণ অনুমোদন করা হয়। কোনো প্রকার যাচাই না করেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যাংকের কর্মকর্তারা পরস্পর যোগসাজশে এ ঋণ অনুমোদন করেন। প্রথমে ৮৯০ কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করা হলেও পরে সেটা ১ হাজার ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। এ কাজে সহযোগিতা করেন ইসলামী ব্যাংকের তৎকালীন এমডি ও পরিচালকসহ ৩৪ কর্মকর্তা।
এজাহারে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৪৭৭ক/১০৯ ধারা ও ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) এবং ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, অনুসন্ধান টিমের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন থেকে মামলা দায়েরের অনুমোদনের পর মামলা হয়েছে। যেখানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের (আইবিবিএল) সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। পাশাপাশি তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান, এমডি, একাধিক পরিচালকসহ ৫৮ জনকে আসামি করা হয়েছে।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন