কুমিল্লার বাসিন্দা আব্দুল মতিন ভান্ডারী। কাজের সন্ধানে চট্টগ্রাম শহরে এসে ২০১৯ সালে ৪ নং চান্দগাঁও এলাকার ভোটার হন। এরপর জীবিকার তাগিদে হাটহাজারীর চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় এলাকায় চলে যান। সেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন।
আব্দুল মতিন বাস্তবে ‘জীবিত’ হলেও কাগজে কলমে, অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে তিনি ‘মৃত’! ফলে, দীর্ঘদিন ধরে তিনি সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধাও পাচ্ছেন না। তাছাড়া, নির্বাচন কমিশনের সার্ভার অনুযায়ী তিনি যে মৃত সেটা নিজেও জানতেন না। ৫ বছর আগে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খুলতে গিয়েই বিষয়টি সামনে আসে।
এ বিষয়ে কথা হয় আব্দুল মতিন ভান্ডারীর সঙ্গে। তিনি হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, বিষয়টি জানার পর সমাধান করতে ৫ বছর ধরে আমি কমিশনার কার্যালয় এবং নির্বাচন কমিশনের ধারে ধারে ঘুরছি। কেউ সহযোগিতা করেনি। কখনও কাবিননামা, কখনও জন্মনিবন্ধন, আবার কখনও ভাই বোনের পরিচয়পত্রের কপি জমা দিতে বলে। ঝামেলা ছাড়া দ্রুত সমাধান করতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়ে ৮ হাজার টাকা প্রতারিতও হয়েছি।

ভুক্তভোগী মতিন জানান, আমি মৃত জানার পর, অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোনোভাবেই জীবিত হতে পারিনি। এনআইডি সংশোধন করতে না পারায় কোথাও কোনো সেবা পাচ্ছি না। এমনকি একটি সিম কিনতেও দিতে হয়েছে আমার স্ত্রীর এনআইডি।
মতিন অভিযোগ করেন, যতবারই নির্বাচন কমিশনে যাই তারা বিভিন্ন ডকুমেন্টসের কথা বলে। কিন্তু কেউ সহযোগীতা করে না। এতদিন ধরে ঘুরছি, কেউ কাবিননামা দিতে বলে, কেউ ভাই-বোনের এনআইডি দিতে বলে। আমার ভাই-বোন নেই, কোত্থেকে ভাই-বোনের এনআইডি ম্যানেজ করবো? কোনো সহজ সমাধান দেয়নি কেউ। এই আইডি নিয়ে গত ৫ বছর ধরে ঘুরছি।
সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা করার ক্ষেত্রে তার ডেথ সার্টিফিকেট দিতে হয় সার্ভারে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন আঞ্চলিক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমন কোনো সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি সার্ভারে। এরপরও ২০১৯ সাল থেকে তাকে মৃত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
আব্দুল মতিন জীবিত, তাকে কিভাবে মৃত ঘোষণা করা হলো, এমন প্রশ্ন রেখে জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এনামুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, আমি যেহেতু পুরো বিষয়টি জানি না। তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এনআইডি দেখার পর বলতে পারবো আসলে কিভাবে তিনি মৃত ঘোষিত হলেন। সাধারণত কোনো ব্যক্তিকে মৃত দেখালে তার একটি জন্মনিবন্ধন নিয়ে আসলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করে আমরা এনআইডি আনলক করে দিই। ভুক্তভোগী ব্যক্তি আমাদের কাছে আসলে আমরা এ সমস্যা সমাধান করে দিব।







