কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন বিজি জান (৩৫) এবং রোকসানা (২৫)। তারা শহরের বাকলিয়া এলাকার কল্পলোক আসাকি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। আর এই তথ্য পৌঁছে যায় কথিত সাংবাদিক সোহেল রানা নামের এক ব্যক্তি। চুপেচাপে সবকিছু লুট করে নেওয়ার ফন্দি এঁটে আরও তিনজকে নিয়ে একটি দল গঠন করেন। ডাকাতির আগে দলে ভেড়ান বাকলিয়া থানা পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককেও। পরে তারা পাঁচজন মিলে দুই নারীর আলমিরা ঘেঁটে নগদ ৩৫ হাজার টাকা ও ৮ ভরি স্বর্ণ লুটে নেন। এর মধ্যে বিষয়টি ভবনের কেয়ারটেকার বুঝতে পেরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাঁচজনকে আটক করেন।
গত বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) পুলিশ অভিযুক্ত ওই এএসআইসহ ৬ জনকে আদালতে তুললে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আটক ৬ জন হলেন, নগরের বাকলিয়া থানার চাক্তাই পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ফারুক মিয়া, কথিত সাংবাদিক সাহেল রানা, তার সাথে থাকা সহযোগী জয়নাল আবেদীন, মো. আকবর, ফজলুল করিম ও মিজানুর রহমান।

ডাকাতির শিকার ওই দুই রোহিঙ্গা নারী হলেন- কক্সবাজার জেলার উখিয়া থানার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের লাল মিয়ার মেয়ে বিবি জান (৩৫) এবং ভাইয়ের স্ত্রী রোকসানা (২৫)। তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে এসে নগরের বাকলিয়া থানার কল্পলোক আবাসিক এলাকার নর্ম ভিলা নামক একটি ভবনের দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন।
পুলিশ বলছে, ডাকাতির ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশ সদস্যকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় মামলাও হবে। এছাড়াও, যে রোহিঙ্গাদের বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তারা ক্যাম্প থেকে কিভাবে পালিয়ে এলো তা খতিয়ে দেখা হবে। পরবর্তীতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তাদের ফেরত পাঠানো হবে।
এদিকে, শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনায় ওই ভবনের কেয়ারটেকার আবদুল আজিজ বাদী হয়ে ডাকাতির অভিযোগে আটক ছয়জনসহ মোট ৯ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। আটক ছয়জন ছাড়াও এজাহারে মোরশেদ, ওমান ও শাহীন নামে তিন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) কাজী মো. তারেক আজিজ জানিয়েছেন, একটি ভবনে থাকা রোহিঙ্গাদের বাসায় ডাকাতি করে পালানোর সময় এক সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিসহ মোট ৫ জনকে আটকে পুলিশে দেয় স্থানীয়রা। আর এ ঘটনায় জড়িত পালিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্যকে বাকলিয়া থানা পুলিশই আটক করে।
বাকলিয়া থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, মূলত ডাকাতির পরিকল্পনা ছিল সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া সোহেলের। তিনি বান্দরবান থেকে ডিক্লারেশন নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে বের হওয়া একটি আঞ্চলিক পত্রিকার কার্ড ব্যবহার করে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। তার কাছেই রোহিঙ্গা ওই দুই নারীর বাসা নেওয়া এবং তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকারের বিষয়ে তথ্য ছিল। আর পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্যদের নিয়ে তল্লাশির নামে আতঙ্ক তৈরি করে এসব সম্পদ লুট করতে চেয়েছিলেন তারা।

যদিও, সোহেল রানার কাছে একটি জাতীয় পত্রিকার কার্ডও পাওয়া যায়। সেখানে নিজেকে তিনি স্পেশাল ক্রাইম রিপোর্টার পরিচয় দেন।