চট্টগ্রামে সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের মুক্তির দাবি ঘিরে আদালত প্রাঙ্গণে ঘটা ঘটনা ও আইনজীবী আলিফ হত্যাকাণ্ডে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে মনে করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী।
চিন্ময়কে প্রিজনভ্যানে তোলার পর পুলিশের নিস্ক্রিয়তা, প্রিজনভ্যানে চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেলÑ পুলিশের কাছে এর জবাব চেয়ে প্রশ্ন রেখে বলেন, আইনজীবী আলিফকে হত্যার সময়ে ‘জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল’, এরপরও কেন তাদের ডাকা হয়নি?
আজ বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) সকালে আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার বিচার চেয়ে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এসব প্রশ্ন রাখেন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির শীর্ষ এ নেতা। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের ‘ল’ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের আয়োজনে এতে জেলা আইনজীবী সমিতি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থী, নিপীড়ন বিরোধী আইনজীবী সমাজসহ বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরাও যোগ দেন।

এ সময় চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতির এই শীর্ষ নেতা বলেন, আজ অত্যন্ত শোকাহত এবং ভারাক্রান্ত আমরা। আমরা একটি কঠিন সময়ের মধ্যে আছি। আমাদের চট্টগ্রামের আদালত অঙ্গন ও আশেপাশে এ ধরনের ঘটনা আগে হয়নি। গত পরশু ইসকনের এক সন্ত্রাসী নেতাকে গ্রেপ্তার করে তাকে আদালতে তোলার পর বিজ্ঞ আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিলেন এবং প্রিজন ভ্যানে তোলা হলো। আমরা পরবর্তীতে দেখলাম তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ওই প্রিজন ভ্যানে তোলার পর ইসকন সমর্থিত সন্ত্রাসীরা ভ্যান ঘেরাও করে আদালত অঙ্গনে উল্লাস করেছে। আমরা পুলিশকে দেখেছিলাম নিষ্ক্রিয়। তারা নিরাপদ স্থানে দূরে দাঁড়িয়ে ছিল। এটার পেছনে পুলিশের ইন্ধন আছে বলে আমরা মনে করি।
পুলিশ প্রিজনভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুলিশ প্রিজন ভ্যান ফেলে সেখান থেকে চলে গেছে। আমি পত্রিকায় দেখেছি এই চিন্ময় দাস প্রিজনভ্যান থেকে হ্যান্ডমাইক দিয়ে বক্তব্য দিয়েছে আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। আমি অনুরোধ করবো যতগুলো মামলা হবে এই চিন্ময় দাসকে যেন এক নম্বর আসামি করা হয়। যদি তাকে আসামি না করা হয় আমরা মানবো না। বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে ব্যর্থ করার জন্য দেশে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আন্দোলনের নামে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে। পুলিশের মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছে। আলিফকে যেদিন হত্যা করা হচ্ছে এই জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পর্যাপ্ত পুলিশ, আর্মি, বিজিবি ছিল। তাদেরকে কেন ডাকা হয়নি?
এ সময় তিনি পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ চেয়ে বলেন, চিন্ময় দাসের হাতে হ্যান্ডমাইক কিভাবে গেল- এর জবাব দিতে হবে। নাহলে পুলিশ কমিশনার চট্টগ্রাম থাকতে পারবেন না। আমরা পুলিশ কমিশনারকে চাই না। জুলাই ৩৬ এ অনেক রক্ত গিয়েছে। অনেকে শহীদ হয়েছে। তাদের রক্তের সাথে বেঈমানি করা যাবে না। আমরা সব জানি, চিনি। পুলিশ প্রশাসন এখনো বসে আছে। আপনাদের হুঁশিয়ার করছি, আপনারা স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করুন। আমরা গিয়ে টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ফেলবো না হয়।
কোন ধারায় চিন্ময়কে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে জানতে চেয়ে আইনজীবী নেতা নাজিম উদ্দীন বলেন, আমরা জানতে পেরেছি চিন্ময় দাসকে ডিভিশন দেওয়া হয়েছে। জেল কোডের নিয়ম এবং আইনের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামিকে ডিভিশন দিয়েছেন? জেল সুপার এবং সিনিয়র জেল সুপারকে অনুরোধ করবো আপনি ডিভিশন প্রত্যাহার করবেন। তাকে সাধারণ কয়েদির সাথে রাখবেন। সে এমন কোনো ইম্পরট্যান্ট ব্যক্তি নয়। বিগত সরকারে আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাকে ডিভিশন না দিয়ে অসম্মান করা হয়েছে।