১৪ই মার্চ, ২০২৫

৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে রহস্য উদঘাটন করল পিবিআই

স্ত্রীকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে পাহাড়ে নিয়ে খুন করে পাষণ্ড স্বামী!

শেয়ার করুন

দুবাই প্রবাসী স্বামী ইয়াসির আরাফাত দীর্ঘদিন পর ছুটিতে দেশে ফিরেছেন। বন্ধুদের সঙ্গে স্ত্রীসহ বঙ্গবন্ধু টানেলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘোরার পরিকল্পনা করেন। পকিল্পনা অনুযায়ী আরাফাত চট্টগ্রামের আনোয়ারায় এক বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে প্রচুর ইয়াবা সেবন ও মদ পান করেন। এরপর গভীর রাতে বঙ্গবন্ধু টানেল ঘুরতে যাবেন বলে স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি পাহাড়ে। সেখানে পেটে ছুরিকাঘাত করে হত্যা নিশ্চিত করে পালিয়ে যান এবং দুইদিন পর দুবাইতে ফিরে যান।

ঘটনাটি গত পহেলা অক্টোবর চট্টগ্রামের আনোয়ারার চায়না ইকোনমিক জোন এলাকার একটি পাহাড়ে ঘটে। ঘটনার তিনদিন পর ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু, সাথে পরিচয় সনাক্ত করার মতো কোনো তথ্য-উপাত্ত ছিল না। এছাড়া, মরদেহের একটি অংশ পাহাড়ি শেয়াল বা কুকুর খেয়ে ফেলায় পরিচয় সনাক্ত করা যায়নি।

ঘটনার বিস্তারিত জানা যাক

পহেলা অক্টোবর রাতে আমেনাকে খুন করে পাশের নালায় মরদেহ ফেলে দিয়ে পালয়ে যায় তারা তিনজন। পরে লাশ উদ্ধার করলেও মরদেহ পঁচে যাওয়ায় চিহ্নিত করা যাচ্ছিল না। এসময় মামলার রহস্য উদঘাটন করতে দায়িত্বভার পায় পিবিআই। পিবিআই টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াচড়ি এবং বাঘাইছড়ির থেকে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ২ জনকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং হাজী পাড়া এলাকার মোহাম্মদ সোলতান আহমেদের ছেলে জাহেদ নাবেদ (৩০) প্রকাশ মো. জাহেদ প্রকাশ নাহিদ ও আনোয়ারা উপজেলার ইরফান (৩২)।

সম্প্রতি তিন দিনের রিমান্ড শেষে আসামি নাহিদ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নং-৫ চট্টগ্রাম) এর বিচারক ফারদিন মুস্তাকিম তাসিনের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানবন্দি শেষে গ্রেফতার দুই আসামিকে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুত্রে জানায়, গত ৩ অক্টোবর দুপুরে আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন কার্যালয়ের পাশে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটা থেকে গৃহবধূ আমেনার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

এক দিনের মাথায় পরিচয় শনাক্তের পর পিবিআই জানিয়েছে, উদ্ধার করা মরদেহটি আমেনা বেগম (৩৫) নামে এক নারীর। তিনি চট্টগ্রাম নগরীর বলুয়ার দিঘির পাড় এলাকার আবুল কালাম সওদাগর কলোনির বাসিন্দা কামাল উদ্দিনের মেয়ে। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নাগেরকান্দি গ্রামে।

ওই সময় পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহাদাত হোসেন বলেন, ওই নারীর পেটে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। ধারণা করেছিলেন আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করে মরদেহটি পাহাড়ে ফেলে চলে যায়।

গ্রেফতার আসামির দেওয়া তথ্য ও পুলিশ সূত্র আরও জানায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর খুন হওয়া গৃহবধূ আমেনার স্বামী ইয়াসির আরাফাত ফোন করে নাহিদ কে জানান সে দুবাই থেকে আসছে। পার্টি করবে। নাহিদ আগ্রাবাদে থাকেন। পরে ইয়াসিরের সাথে তার আরেক বন্ধু ইরফানসহ আগ্রাবাদে আসে। সেখান থেকে ৩০ তারিখ রাতে সিএনজি করে আনোয়ারায় ইরফানের বাড়িত যান। তারপর তারা সেখানে ইয়াবা ও মদ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পর দিন পহেলা অক্টোবর রাত ১০টার দিকে ইয়াসিরের স্ত্রী ভিকটিম আমেনা তাকে ফোন করেন। তার একটু পর ইয়াসিন ও ইরফান আরেক বন্ধুর গাড়িতে করে নগরীর কালামিয়া বাজার যান। তখন নাহিদ ইরফানের বাড়িতেই ছিলেন। রাত সাড়ে ১২ টার দিকে আমেনাসহ দুজন আবার ইরফানের বাসায় ফিরে যান।

পরে চার জন মিলে এক সাথে ইয়াবা ও মদ সেবন করেন। রাত ৩ টার দিকে তারা প্ল্যান করেন গাড়ি নিয়ে ঘুরতে বের হবেন। গাড়ি নিয়ে বের হয়ে তারা প্ল্যান করেন টানেলে ঘুরতে যাবেন। পরে প্ল্যান পরিবর্তন করে সিদ্ধান্ত নেন পাহাড়ে বসে মদ খাবে। ইরফান তাদের আনোয়ারার একটি পাহাড়ে নিয়ে যান। সেখানে যাবার পর ইয়াসিন ও তার স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। ঝগড়ার এক পর্যায়ে হঠাৎ ইরফান আমেনার পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। পরে ইয়াসির কোমর থেকে একটি ছুরি বের করে আমেনার পেটে ঢুকিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমেনার মৃত্যু হলে তিনজনে মিলে নিহতের কাপড় কেটে নালার মধ্যে লাশ ফেলে দেয়। তারপর সেখান থেকে তিনজন ইয়াসিরের খালাতো ভাইয়ের বাসায় যায়। তারপর যে যার মতো চলে যান। সঙ্গত কারণে ঘটনায় জড়িত কয়েক জনের নাম স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।

তবে পুলিশ সুত্রে আরও জানায়, স্ত্রীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের চায়না ইকোনমিক জোন পাহাড় রেখে গত ৩ অক্টোবর ইয়াসির পুনরায় দুবাই চলে যান। যদিও দুবাই প্রবাসী ইয়াসিন আরাফাতের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বিয়ে হয়। সেই সংসারে একটি সন্তান রয়েছে। তার আগের সংসারেও দুই সন্তান ছিল। কিন্তু ইয়াসিরের পরিবার আমেনাকে মেনে নেয়নি। এ কারণে স্ত্রীকে তিনি নগরের বাকলিয়া তক্তারপুল এলাকায় ভাড়া বাসায় রাখতেন।

আমেনার পিতা কামাল উদ্দিন বলেন, আমার মেয়েকে বেড়ানোর কথা বলে আনোয়ারায় নিয়ে যায় তার স্বামী। সেখানেই আমার মেয়েকে তার স্বামী খুন করেছে।

এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন বলেন, আমরাও জেনেছি পিবিআই দুজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তার করতে পিবিআই কাজ করছেন। আমরাও চেষ্টা করছি।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন