বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানা এলাকায় একে-৪৭ দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছিল কুখ্যাত সন্ত্রাসী সোলায়মান বাদশা। এমন অভিযোগে গতকাল বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
আজ বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানা এলাকায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর একে-৪৭ সদৃশ রাইফেল দিয়ে গুলিবর্ষণের অভিযোগে সন্ত্রাসী সোলায়মান বাদশাকে নোয়াখালী থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

কে এই সোলায়মান বাদশা :
সোলায়মান বাদশা পাঁচলাইশ থানার ষোলশহর দুই নম্বর গেট গ্রিনভ্যালি আবাসিক এলাকার আবু তাহেরের ছেলে। রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায় থেকে কিশোর বয়স থেকে কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ গড়ে তুলে। পরবর্তীতে নিজেই কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে আসে। তার বিরুদ্ধে নগর্রীর পাঁচলাইশ, খুলশী ও চকবাজার থানায় রয়েছে একাধিক মামলা। অভিযোগ আছে সরকার দলীয় একজন কাউন্সিলরের ছত্রছায়ায় সোলায়মান বাদশা নানা অপকর্ম করে বেড়াত।
সোলায়মান বাদশার যত অপকর্ম
ফুটপাতে চাঁদাবাজি-ছিনতাই-ভাড়াটে সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে সব অপকর্মের হোতা সোলায়মান বাদশা। নগরীর দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন মোড় অবধি তার অপরাধের অভয়ারণ্য। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র নাছিম উদ্দিন সোহেল হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি সোলায়মান বছরের পর বছর ধরে ওই এলাকায় নানা অপরাধ করে বেড়ালেও ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
জানা যায়, ২০১৮ সালে দুই নম্বর গেটে এএসআই মালেককে গুলি করেছিলো সোলায়মানের অনুসারী কিশোর গ্যাং গ্রুপের সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছিল, ওই ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রটির মালিক সোলায়মান। পরবর্তীতে এএসআই মালেক হত্যাপ্রচেষ্টা মামলায় তার অনুসারী খোকন চৌধুরীসহ তিন্জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হলেও রহস্যজনক কারণে সোলায়মানকে তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বাদ দেয়া হয়।

সোলাইমান বাদশার নিয়ন্ত্রিত এলাকা :
দুই নম্বর গেট থেকে অক্সিজেন পর্যন্ত অবৈধ টেম্পো লাইন থেকে চাঁদাবাজি। নগরীর ফিনলে স্কয়ার, চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স বিপ্লব উদ্যান হয়ে ২ নম্বর গেট কর্ণফুলী কাঁচাবাজার পর্যন্ত প্রায় দুইশ ভাসমান ভ্যানগাড়ি বসিয়ে অনুসারীদের দিয়ে প্রতিদিন চাঁদা উঠায় বাদশা।
অভিযোগ রয়েছে, দুই নম্বর গেটের পুরো এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের অন্যতম হোতা এই বাদশা । রাজনীতির লেবাস ও প্রভাবে উঠতি কিশোর বা সদ্য কৈশোর পার হওয়া ছেলেদের নিয়ে গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাং। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, দুই নম্বর গেট, ষোলশহর স্টেশন, তুলাতুলি, সিগনাল এলাকা, আল-ফালাহ গলি, মেয়র গলিসহ আশপাশ এলাকায় মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখল বেদখল, অপহরণ, অবৈধ গেস্ট হাউজ, অস্ত্র ব্যবসা, ভাড়াটে খুন করাসহ সব কিছুতেই তার গ্রুপের কেউ না কেউ জড়িত থাকে। ভয়ে কেউ প্রকাশ্যে মুখ খোলে না।