১৫ই মার্চ, ২০২৫

৯ বছর পর ওসি প্রদীপ ও দুই এসআইয়ের বিরুদ্ধে চিকিৎসকের মামলা

মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানোর অভিযোগ

ফাইল ছবি

শেয়ার করুন

৯ বছর আগে চেম্বার থেকে তুলে এনে চাঁদা না পেয়ে চিকিৎককে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, উপ-পরিদর্শক (এসআই) টোটন মজুমদার, এসআই শাফায়েত আহমদসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গতকাল সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জাহাঙ্গীর আলম (৫৫) নামে ভুক্তভোগী ওই চিকিৎসক মামলার আবেদন করেন। মঙ্গলবার বিচারক কাজী সহিদুল ইসলাম মামলাটি আমলে নিয়ে থানাকে এজাহারভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- পাইওনিয়ার হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল, পাইওনিয়ার হসপিটালের পরিচালক মনজুর হোসেনম পাইওনিয়ারের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলম।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়ার বাসিন্দা চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় পথেরহাটে তার পরিচালিত প্রাইভেট চেম্বারে (অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার) রোগী দেখছিলেন। এসআই টোটন মজুমদার তাকে বিএনপির কমিটিতে নাম থাকায় ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেন; অন্যথায় বাঁচতে চাইলে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় এসআই টোটন মজুমদার, এসআই শাফায়েত আহমদ, রাউজান থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের চেম্বারে গিয়ে অপহরণ করে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২টার দিকে নোয়াপাড়ার অ্যাপোলো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সাদা পোশাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তুলে নেওয়া হয়। এরপর মাথায় পিস্তল রেখে চিৎকার না করতে বলে এবং আসামিরা চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মারধর করে। পরে এসআই টোটন মজুমদারসহ আসামিরা মিলে ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল তারিখের একটি মিথ্যা মামলা সাজায়। সেই মামলার প্রেক্ষিতে ১৫ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে গ্রেপ্তার করে প্রায় ৮ ঘণ্টা পর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আসামি পাইওনিয়ার হসপিটালের চেয়ারম্যান ডা. ফজল করিম ওরফে বাবুল সহায়তায় ওই মিথ্যা মামলার চার্জশিট দিয়ে মামলার বিচার নিষ্পত্তির জন্য ২০১৫ সালের ১৮ জুন সংশ্লিষ্ট গ্রাম আদালতে পাঠান।

তবে এর আগের দিন ১৭ জুন মিথ্যা মামলাটির ভিকটিম মো. রাসেল শেখ ওরফে মো. রাসেল ড্রাইভার হলফনামায় উল্লেখ করেন- প্রকৃতপক্ষে কথিত ওই ঘটনার তারিখে তার সাথে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলমের দেখা হয়নি বা এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বাদী কেন ওই মামলাটি করেছে তার জানা নেই। এই বিষয়ে তাকে কোনো ডাক্তার পরীক্ষা করে নাই। তদন্তকারী কর্মকর্তা কোনো রকম জিজ্ঞাসাবাদও করে নাই।

চলতি বছরের ১৩ আগস্ট আসামি পাইওনিয়ারের সুপারভাইজার মো. জাহাঙ্গীর আলমও হলফনামা ঘোষণা করেন, রাউজান থানার এসআই টোটন মজুমদার, সাবেক এসআই শাফায়েত আহমদ, তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশের আদেশে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের চাপে পড়ে মিথ্যা মামলায় বাদী হিসেবে যুক্ত হন। ওই মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করলে তার কোনো আপত্তি নেই।

২৯ আগস্ট গ্রাম আদালতে মিথ্যা মামলাটি বাদী ও সাক্ষীর হলফনামা বিবেচনা করে এবং অভিযোগকারী পক্ষের অনুপস্থিতি ও মিথ্যা অভিযোগ হিসেবে প্রমাণ হওয়ায় খারিজ করা হয়। মামলার বিষয়ে ভুক্তভোগী চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুর ১২টায় আমাকে তুলে নিয়ে যায় ওরা। এর ৮ ঘণ্টা পর পাইওনিয়র হসপিটালের সুপারভাইজার মিথ্যা মামলাটি করে। আর অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার রাসলকে কথিত ভিকটিম বানানো হয়। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে এ বছরের ১৪ আগস্ট পর্যন্ত আমার চেম্বারটি বন্ধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, গতকাল (সোমবার) আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। আজ (মঙ্গলবার) আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে রাউজান থানাকে মামলা নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন।

শেয়ার করুন

আরও পড়ুন