আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে যেন পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে চলছে দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)।
প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে সোমবার শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর মঙ্গলবার থেকেই লেনদেন শুরু হয় দেশের দুই পুঁজিবাজারে। প্রথম দিন থেকেই রেকর্ড উত্থান শুরু হয়।
২০১০ সালের কেলেঙ্কারি ও বড় ধসের পর থেকে গত ১৪ বছরে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি পুঁজিবাজার। এর মধ্যে ২০১৮ সালে কিছুদিন বাজারে গতি ফিরলেও বেশি দিন স্থায়ী হয়নি।

নীতি নির্ধারকদের একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত, দুর্বল কোম্পানি তালিকাভুক্তি, ভালো মানের শেয়ারের অভাব, শেয়ার নিয়ে কারসাজির মতো ঘটনায় পুঁজিবাজারে কমতে থাকে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। ফলে শুধু কারসাজি চক্র বাজারকে খুব বেশি দিন চাঙা রাখতে ব্যর্থ হয়।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনেকেই তখন আক্ষেপ করে বলতেন, ‘এই সরকারের আমলে বাজার ভালো হবে না।’ গত তিন দিনে সেই কথার প্রতিফলন পাওয়া গেল পুঁজিবাজারে।
সরকার পতনের পরের দিন মঙ্গলবার ডিএসইর প্রধান সূচক বৃদ্ধি পায় ১৯৭ পয়েন্ট। বুধবারৎ বৃদ্ধি পায় আরও ১৯২ পয়েন্ট।
অনেক বিনিয়োগকারীই দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা ও নতুন সরকার কবে হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় প্রথম দুই দিন বিনিয়োগে আসনি। ফলে সূচক বাড়লেও বড় অঙ্কের লেনদেন হয়নি ডিএসইতে, তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হবে, এমন সংবাদে বেশির ভাগ ভালো মানের শেয়ার সকাল থেকেই ছিল ক্রেতাশূন্য। দিন শেষে ডিএসইর সাধারণ সূচক বৃদ্ধি পায় ৩০৬ পয়েন্ট, যা স্মরণকালের রেকর্ড।
গতকাল শুধু সূচক বৃদ্ধিই নয়, লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬০৬ কোটি টাকা, যা তার আগের দিনের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।

আগের দিন ডিএসইতে মোট লেনদেন ছিল ৭৭৫ কোটি টাকা। বৃহস্পতিবার যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায় ডিএসই। ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখ করার মতো।
আসিফ আহমেদ নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘শেষ কবে পুঁজিবাজারে এত উচ্ছ্বাস ছিল, মনে পড়ছে না। লেনদেন ও সূচকের উত্থান আমাদের মন ভরে দিয়েছে। এখন এই ফ্লোটা থাকলেই আমরা খুশি।’
ঢাকার বাজারে ওই দিন লেনদেনে অংশ নেয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বৃদ্ধি পায় ৩৬৪টির এবং দাম কমে ২৭টির। আর অপরিবর্তিত ছিল সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম।
ওই দিন ডিএসইএস ও ডিএস-৩০ সূচক দুটিও ছিল বেশ ইতিবাচক।
সবচেয়ে লক্ষণীয় ছিল গত তিন দিনের বাজার মূলধন বৃদ্ধির ঘটনা।
গত মঙ্গলবার সকালে ৬ লাখ ৪৫ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকার বাজার মূলধন নিয়ে লেনদেন শুরু হয়, যা বৃহস্পতিবার দিন শেষে দাঁড়ায় সাত লাখ ৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন দিনে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের জ্যেষ্ঠ বিনিয়োগকারী হারুন শেখ বলেন, ‘আমার প্রায় ১৮ বছরের পুঁজিবাজার ব্যবসার ক্যারিয়ারে তিন দিন পরপর এভাবে উত্থান দেখেছি বলে মনে পড়ছে না।’
২০১০ সালের কেলেঙ্কারির আগে কিছুদিন এমন উত্থান ছিল।
হারুন শেখ বলেন, ‘দীর্ঘদিন মানুষের অনাস্থায় থাকা বাজারে এখন স্বস্তি ফিরেছে। ওই সরকার তাদের ১৬ বছরেও পুঁজিবাজারের জন্য ভালো কিছু করতে পারেনি।’