চাহিদা অনুযায়ী ডিম উৎপাদন ও আমদানি করতে না পারায় দেশীয় বাজারে ব্যাপক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে ডিমের দাম বেড়ে আকাশ ছুঁয়েছে। এতে লাগামহীন ডিমের বাজারে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে চাপ আরও বাড়ছে।
এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি করতে না পারায় দুই দিন ধরে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম ডিমের আড়ত। গতকাল রোববার এবং আজ নগরের পাহাড়তলী বাজারে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়তলী পাইকারী ডিমের ১৫টি আড়তের সামনে ঝুলছে তালা। নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিম কিনতে এসে ফেরত যাচ্ছে খালী হাতে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ডিম আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কর লিটন বলেন, গেল সেপ্টেম্বরে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। কিন্তু সরকারের নির্দেশনা তোয়াক্কা না করে সরবরাহকারী মধ্যস্থভোগী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি দামে ডিম সরবরাহ করছে। এ জন্য আমরাও বাড়তি দামে ডিম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। কিন্তু এর মধ্যে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে ডিম বিক্রি না করার কারণে আমাদেরকে জরিমানা করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই আমরা দোকান বন্ধ রেখেছি। যতক্ষণ পর্যন্ত সরবরাহকারীরা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ডিম সরবরাহ করবে না আমাদের আড়তও ততদিন বন্ধ থাকবে।

এর আগে গত মাস সেপ্টেম্বরে খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দাম বেঁধে দেয় সরকার। সে হিসাবে প্রতিডজন ডিমের দাম ১৪২ টাকা। তবে প্রশাসনের নির্দেশনাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বর্তমানে প্রতিটি ডিম সরবরাহ করছে ১২টা ২০ পয়সায়। ফলে অনিয়ন্ত্রিত অবস্থায় চলে যায় ডিমের দাম। খুচরা পর্যায়ে প্রতিটি ডিম কোথাও কোথাও ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে আবদুল শুক্কর লিটন বলেন, সরকার ১০ টাকা ৫৮ পয়সা দরে মধ্যস্থভোগী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান থেকে কেনার নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু সরকারের নির্দেশনাটি কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রেখেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদেরকে ব্যাংক পে অর্ডার দিতে বলে সরকার নিধারিত মূল্য টাকায়। পরে বিভিন্ন খরচ দেখিয়া বাড়তি টাকা আদায় করে নেয়। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তারা ডিম সরবরাহ বন্ধ করে দেয় । তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত সরবরাহকারীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে ডিম সরবরাহ করবে না আমরাও ততদিন আড়ত বন্ধ থাকবে।
তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান রানা ফিডের জেনারেল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম খান বললেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, আমাদের এখন সরবরাহ সংকট চলছে। এরপরেও সরকার নির্ধারিত মূল্য আমরা সরবরাহ করছি। কিন্তু যাদের সরবরাহ দিতে পারছি না তারা বাজারে বেশি দামের গুজব ছড়াচ্ছে।
অন্যদিকে আড়তে ডিম বিক্রি বন্ধ থাকলেও নগরের বিভিন্ন স্থানের খুচরা দোকানে অপরিবর্তিত দামে বিক্রি হচ্ছে এ পণ্যটি। নগরের ফিরিঙ্গী বাজার ও বকশির হাট এলাকায় বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ডজন প্রতি ১৭০ টাকা আর সাদা ডিমের ডজন ১৬৫ টাকা।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, চট্টগ্রাম নগরে সবচেয়ে বেশি আড়ত রয়েছে পাহাড়তলী বাজাররে। এ অবস্থায় তারা আড়ত বন্ধ রাখলে খুচরা পর্যায়ে দামে প্রভাব পড়বে। এ সময় প্রশাসন, খুচরা-পাইকারি, মধ্যস্বত্বভোগী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে একসাথে বসতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাধানে আসা জরুরি।

তবে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ বলেন, আমরা খবর পাওয়ার পর আমাদের একটি প্রতিনিধি দল পাহাড়তলী বাজারে আড়তে গেছে। আলোচনার মাধ্যমে সামাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।