এস আলমের গাড়িকাণ্ড যেন বিএনপি নেতাকর্মীদের পিছু ছাড়ছে না। একের পর এক বেরিয়ে আসছে চট্টগ্রামে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এস আলমের সংশ্লিষ্টতা। অভিযোগ আছে, রাতের আঁধারে এস আলমের ওয়্যারহাউস থেকে দক্ষিণ জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের তদারকিতে যে ১৪টি গাড়ি সরিয়ে ফেলা হয়েছে, সেগুলো উত্তর-দক্ষিণ ও নগরে শীর্ষ নেতারা ভাগ করে নিয়েছে।
সবশেষ গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর জামালখান ওয়ার্ডের চেরাগী পাহাড় মোড় এলাকার একটি আবাসিক ভবনের পার্কিং থেকে এস আলমের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল গাড়ি জব্দ করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। চট্ট-মেট্রো-ঘ-১১-৫৩৪৪ রেজিস্ট্রেশন নম্বরের গাড়িটির মালিক এস আলম গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সোনালী লজিস্টিকসের নামে নিবন্ধিত। এটির রেজিস্ট্রেশনের সময় ঠিকানা উল্লেখ করা হয় আসাদগঞ্জ এলাকার এস আলম ভবনের।
সূত্রে জানা গেছে, ওই পার্কিং-এ আরও দুইটি গাড়ি ছিল। পুলিশ আসার খবর পেয়ে দ্রুত গাড়িগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। দুইটি সম্ভব হলেও তার আগেই পুলিশ চলে আসলে জব্দকৃত গাড়িটি সরাতে পারেনি।

পুলিশ জানায়, ‘সানমার স্প্রিং গার্ডেন’ নামের ভবনটির মালিক কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি মনজুরুল আলম চৌধুরী। তিনি নিজেও ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন।
যদিও তিনি গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, এস আলমের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই গাড়িটি আমার পার্কিংয়ে কে রেখে গেছেন তা জানি না। কিন্তু, আজ বিকেলে গোপনে সৌদি আরব চলে যাওয়ার চেষ্টাকালে শাহ আমানত বিমানবন্দরে তিনি আটক হন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন শেখ আবদুল্লাহ আলমগীর গণমাধ্যমকে জানান, তিনি ওমরাহ করতে সৌদি আরব যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তি ছিল, তাই দেশত্যাগ করতে দেওয়া হয়নি।
জনমনে প্রশ্ন, এস আলমের সঙ্গে যদি তার সংশ্লিষ্টতা নাইবা থাকে তাহলে ওমরাহ’র নামে গোপনে সৌদি আরব চলে যাবেন কেন? তাও গতকাল তার বাসার নিচে এস আলমের গাড়ি পাওয়ার পর।
এর আগে গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যায় নগরীর কালুরঘাট এলাকায় এস আলমের একটি ওয়্যারহাউস থেকে ১৪টি বিলাসবহুল গাড়ি বের করে অন্যত্র সরিয়ে ফেলার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম এবং কর্ণফুলী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এস এম মামুন মিয়াকে দল থেকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাবে সন্তুষ্ট না হওয়ায় এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে তীব্র সমালোচনার মুখে দল থেকে তাদের সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তার আগের দিন ২৮ আগস্ট এস আলমের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল গাড়িতে চড়তে দেখা যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। মিতসুবিশির স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের জিপে করে ওইদিন তিনি কক্সবাজার থেকে চকরিয়া-পেকুয়ায় যান। বহর নিয়ে সালাউদ্দিনের যাত্রার কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমা চান বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন। যদিও তাকেও শোকজ দেওয়া হয়েছিল দল থেকে এবং তিনদিনের মধ্যে কারণ জানতে চেয়েছে দলটি।
মহানগরনিউজ/এআই